মোহাম্মদ আলী : “আগে আট দশ হাজার টাকায় মাস যেত এখন ত্রিশ পঁয়ত্রিশ টাকাতেও যায় না! তখন দ্রব্যমূল্য কম ছিল। জীবন যাপন ছিল সহনশীল পর্যায়ে। এখন আমাদের মতো গরীব খেটে মানুষগুলোর জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে।”
সংবাদ মাধ্যমের ছড়াছড়ির যুগে ছাপা সংবাদপত্র বিক্রি করে সাংসার কেমন চলছে জানতে চাইলে উপরের কথাগুলো বলেছেন, সংবাদপত্রের প্রবীণ হকার বা এজেন্ট জবেদ আলী।
তিনি আরও জানান, ২০ বছর আগে যেপরিমাণ সংবাদপত্র নগদ টাকায় বিক্রি হতো এখন সেপরিমান হয় না। কমে গেছে পাঠক। কমে গেছে সংবাদের মান। কমে গেছে পত্রিকার সরবরাহও । আগে জামালপুরে ৬/৭ হাজার পত্রিকা আসত। এখন আসে ৪/৫ হাজার। এর জন্য তিনি সংবাদপত্রের পক্ষপাতিত্ব, মানহীন সংবাদ প্রকাশ , সংবাদেূর নানা মাধ্যমের সৃষ্টি ও সংবাদের সহজলভ্যতা ইত্যাদিকে কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। এমতাবস্থায় পাঠক ধরে রাখতে সংবাদ মাধ্যম গুলোর নিরপেক্ষতা ও সংবাদের মান বৃদ্ধি করা জরুরী। নইলে এক সময় ছাপা সংবাদপত্রের পাঠক হারিয়ে যাবে, বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জামালপুর জেলার বগাবাইদ গ্রামের মরহুম আবেদ আলীর ছেলে জবেদ আলী, সংবাদপত্রের হকার পেশায় আসেন ৮০র দশকের গোড়ার দিকে । তখন জাতীয় পত্রিকা বলতে ছিল দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, সংবাদ, দৈনিক বাংলা, সংগ্রাম, অবজারভার এর মতো হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা। পত্রিকার মূল্য ছিল ৭০ পয়সা থেকে ১টাকা। সেই সময়ে তিনি প্রথম দিকে পায়ে হেঁটে, পরে সাইকেলে করে বর্তমানে মটর সাইকেলে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। তখনকার হকার জবেদ আজকের এজেন্ট। এই দীর্ঘ সময়ে সংবাদ ও সংবাদপত্রের ব্যাপারে তিনি অর্জন করেছেন বিরাট অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন। তিনি বলেন, চোখের সামনে কত সংবাদপত্রের উত্থান পতন দেখালাম। দেখলাম এ পেশায় হকারদের আসা যাওয়া। নানা সঙ্কটের মাঝেও আমি রয়েগেছি। পাঠকের দ্বোয়ারে সংবাদপত্র পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়তো জীবনের শেষ দিনটা কাটবে। এ পেশায় জীবনের অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঠকদের ভালোবাসায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এইটুকুই। ঝড়, তুফান , বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাজীবন মানুষের ঘরে খবর পৌঁছালাম। কিন্তু, কেউ আমার জীবনের খবর নিল না। দৈনিক আজকের জামালপুরকে ধন্যবাদ একজন খবরের কাগজের ফেরিওয়ালার জীবনের খবর জানতে চাওয়ার জন্য! যেতে যেতে তিনি গেয়ে শোনালেন সেই বিখ্যাত গানের দুইটি লাইন ” প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে।