Sunday, September 24, 2023
Homeদেশজুড়েজেলার খবরএকাত্তরের গণহত্যার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য

একাত্তরের গণহত্যার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য

সীমান্ত দাস : ছাত্রজীবনের কৃতিত্ব আর পেশাগত জীবনের দক্ষতার কারণে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছিলেন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ লন্ডনের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল। সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। ২০ মার্চ গিয়েছিলেন বাড়িতে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামে। বাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক বাবা দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ও মা রাজলক্ষ্মী দেবী। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় অনুদ্বৈপায়ন যখন বাড়ি গেলেন, তখন সবার মধ্যে স্বস্তি কাজ করেছিল। দেশ তখন উত্তাল।
সবার মনে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা। তাই ২৪ মার্চ মা রাজলক্ষ্মী দেবী ছেলেকে বারবার থেকে যেতে বলেছিলেন। অনুদ্বৈপায়ন জানতেন না, সেটাই ছিল তাঁর শেষ বিদায়।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অনুদ্বৈপায়ন যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে, বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীদের কাছে বিদায় নিতে। ক্লাব থেকে ফেরার পথে গিয়েছিলেন সহকর্মী শিক্ষক জালালুর রহমানের বাসায়।
সেদিনের কথা মনে করে অধ্যাপক জালালুর রহমান পরবর্তী সময়ে বারবার অনুশোচনায় পুড়েছেন।
কারণ, ব্যাচেলর হলে ফিরে যাওয়ার সময় অনুদ্বৈপায়ন বলেছিলেন, ‘হলে যেতে কেন জানি ভয় করছে!’ ২৫ মার্চের গণহত্যার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছাত্রদের আবাসিক হল জগন্নাথ হল থেকে। অপারেশন সার্চলাইটের সেই ভয়াবহ কালরাত ভোর হওয়ার আগেই পাকিস্তানিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য।
তাঁর শেষশয্যা হয়েছিল জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের গণকবরে।
অনুদ্বৈপায়নের অন্তিম সময়টুকু খুব কাছ থেকে দেখার দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল পরিমল গুহের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল সার্ভেন্টস কোয়ার্টার-সংলগ্ন ম্যানহোলে ১৯ ঘণ্টা আত্মগোপন করে ছিলেন জগন্নাথ হলের তখনকার সাধারণ সম্পাদক পরিমল। তিনি জানান, জগন্নাথ হলে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে রাত সাড়ে ১২টায়। রাতের তা-বলীলা শেষ হলে ভোরে পাকিস্তানি সৈন্যরা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে জীবিত ব্যক্তিদের। সে সময় বন্দী হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য।
২৬ মার্চ খুব ভোরে অন্ধকারে কজন পাকিস্তানি সেনা তাঁকে বেঁধে নিয়ে এসে জগন্নাথ হলের সংসদ ভবনের সামনে ফাঁকা স্থানে উবু করে বসিয়ে রাখে। বিড়বিড় করে কী যেন বলছিলেন অনুদ্বৈপায়ন। একটু পর সব থেমে যায় গুলির আঘাতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments