সীমান্ত দাস : মুক্তিযুদ্ধের ১৬ই ডিসেম্বরেও চলেছিলো বুদ্ধিজীবি নিধন। এদিন আল বদর বাহিনী অপহরণের পর পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছিলো শহীদ বুদ্ধিজীবি ড. আবুল কালাম আজাদকে। তিনি ছিলেন ১৯৭১ এ ঢাকায় শহীদ হওয়া সর্বশেষ বুদ্ধিজীবি।
গণিতের অসাধারণ এক শিক্ষক ছিলেন ড. আবুল কালাম আজাদ। ষাটের দশকে গণিতজ্ঞ হিসেবে তাঁর নাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ রয়্যাল মিটিওরলজি সোসাইটি, ব্রিটিশ ফলিত গণিত সোসাইটি ও বোস্টন মিটিওরলজি সোসাইটির ফেলো ছিলেন তিনি।
ছাত্রজীবনে অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অবরুদ্ধ ঢাকায় তিনি পরিবারসহ থেকেছিলেন ঢাকায়। চিরকুমার আবুল কালাম আজাদ মা, চার ভাই ও চার বোনসহ থাকতেন আজিমপুরে।
ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর বাবা বেঁচে না থাকায় তিনিই ছিলেন পরিবারের কর্তা। তাঁর আজিমপুরের বাসায় নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন, থাকতেন।
আবুল কালাম আজাদ ভীষণ আশাবাদী ছিলেন, এ দেশ স্বাধীন হবেই। যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও এই স্বাধীনতা তিনি দেখে যেতে পারেননি।
১৬ই ডিসেম্বর ভোর ৫টা থেকে নিয়াজীর নির্দেশে যুদ্ধ বিরতি চলা স্বত্বেও আল বদরের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ আশরাফুজ্জামান খান এবং ‘অপারেশন ইনচার্জ’ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের উপস্থিতিতে আল বদরের পাঁচজন সদস্য সকালে তাঁদের আজিমপুরের বাসায় ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা আজাদের সামনে রিভলবার ধরে তাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে অকারণ তল্লাশী চালায়। এসময় তাঁর ছোটবোন তাঁকে ছেড়ে দিতে আশরাফুজ্জামান খানের পায়ের উপর পড়ে ক্ষমা চাইলেও মন গলেনি হায়েনাদার। তাঁকে কাদালেপা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর তার পরিবারের সদস্যরা রায়ের বাজার বধ্যভূমি সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছিলেন। তখন আজাদের ছোট ভাই ‘ইভনিং পোস্ট’- এর সম্পাদক হাবিবুল বাশার, বড় ভগ্নিপতি ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সির মালিক গোলাম রসুল ড. আজাদের সন্ধান নেওয়ার জন্যে নানাভাবে চেষ্টা করেনছিলেম।
১৮ই ডিসেম্বর তাঁর লাশ পাওয়া যায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে। সমগ্র শরীরে জুড়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাতের চিহ্ন। দু হাত পিছনে গামছা দিয়ে বাঁধা আর লুঙ্গিটা উরুর উপরে আটকানো। মুখমন্ডলে ভয়াবহ আঘাতের চিহ্ন।