উৎপল কান্তি ধর : ১৯৪৭ সালে যে সময়টিতে শুধু ধর্মের কারণে অসংখ্য মানুষ এই অঞ্চল থেকে স্রোতের মতো দেশান্তরী হয়ে পশ্চিম বাংলায় যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় কলকাতার ব্যবসা বাণিজ্যের পাঠ চুকিয়ে সেখানকার অঢেল সম্পদের মায়া ত্যাগ করে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রণদা নিজ মাতৃভূমিতে পাকাপাকিভাবে ফিরে আসেন। রণদা প্রসাদ সাহা।
শৈশবে মানবকল্যাণের যে দীক্ষা নিয়েছিলেন সেই আদর্শ বাস্তবায়ন ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পূর্বে ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে তাঁর সমুদয় সম্পত্তি এই ট্রাস্টের অধীনে লিখে দেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত জনহিতকর প্রতিষ্ঠানগুলো এই ট্রাস্টের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-
কুমুদিনী হাসপাতাল (মির্জাপুর), কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটি, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস, ট্রেড টেনিং স্কুল, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাপটস, কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস, আরপি সাহা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি।
প্রতিষ্ঠানগুলো টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এই অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাস্ট মানবতার সেবায় অনন্য অবদার রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়।
শুধু মির্জাপুর নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষের এখনো ভরসা কুমুদিনী হাসপাতাল।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় ও তাঁর কাজের যথাযথ স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে রণদা প্রসাদ সাহার শুভাকাক্সক্ষীরা দেশত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে এই অকুতোভয় মানুষটি কোথাও যেতে রাজি হননি। ১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানী বাহিনী রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানী প্রসাদ সাহা (রবি)-কে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁরা আর কখনও ফিরে আসেননি। মিশে গেছেন এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে। তাঁদের রক্তে আমরা পেয়েছি আজকের বাংলাদেশ। বিন¤্র শ্রদ্ধা।