Friday, September 29, 2023
Homeজামালপুরএকাত্তরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যার শিকার ফাদার মারিও ভেরোনেসি

একাত্তরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যার শিকার ফাদার মারিও ভেরোনেসি

উৎপল কান্তি ধর: ছবির সৌম্য শান্ত চেহারার মানুষটির নাম- মারিও ভেরোনেসি; ইতালির মানুষ, ক্যাথলিক চার্চের যাজক ছিলেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের হাতে শহিদ হবার সময় যশোরে ক্যাথলিক চার্চের যাজক ছিলেন ফাদার মারিও ভেরোনেসি।
ফাদার মারিও ভেরোনেসিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী হত্যা করে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল। সেদিন ছিল খ্র্রিস্ট ধর্মাম্বলীদের পাম সানডের অনুষ্ঠান। পাম সানডে হলো ঈশা নবির জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তনকে স্মরণ করার দিন।
২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বাঙালি জেনোসাইড মিশন ‘অপারেশান সার্চলাইট’ শুরু হবার পর সারা দেশে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী-ইপিআর-পুলিশের বাঙালি সদস্য, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কর্মী, বাঙালি জনতা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়। যশোরে মুক্তিযোদ্ধারা মার্চ-এপ্রিলের প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় ক্যাথলিক চার্চের গাড়ি ব্যবহার করেছিল। যশোরে ক্যাথলিক মিশনারির ফাতিমা হাসপাতালে প্রতিরোধ যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যশোর স্টর্ম করে ০৪ এপ্রিল। যশোরে প্রবেশ করার পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে পিউনিটিভ জেনোসাইডাল এ্যাকশান নেয়।
স্থানীয় জামাত-ই-ইসলামি ও মুসলিম লীগ নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় বিহারিরা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে চিনিয়ে দেয় কারা প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিল; এরা পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে চার্চের বিষয়ে অবহিত করে। যশোরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী প্রবেশের পর স্থানীয় মানুষরা যশোর ক্যাথলিক চার্চ ক্যাম্পাসে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিল। চার্চে আশ্রয় নেয়া মানুষরা ভেবেছিল- পশ্চিমাদের পরিচালিত চার্চে হামলা করবে না পাকিস্তানিরা। কিন্তু বাঙালি হত্যার নেশায় পেয়ে বসেছিল পাকিস্তানিদের। বিগ গেমে যেমন বুনো প্রাণীকে হত্যা করে, তেমনি করে বাঙালিকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানিরা।
১৯৭১ সালের ০৪ এপ্রিল বিকেলে ০৪ টার সময় যশোর ক্যাথলিক চার্চ ক্যাম্পাসে হামলা করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। ফাদার মারিও ভেরোনেসি পাকিস্তানি সৈন্যদের আসতে দেখে হাত উপরে তুলে ওদের সাথে কথা বলে শান্ত করতে চেয়েছিলেন। উনি ভেবেছিলেন, সৈন্যদের শান্ত করতে পারলে চার্চ ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর প্রাণ বেঁচে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানিরা কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাঁর বুকে গুলি চালায়। ফাদার মারিও ভেরোনেসি একটি সাদা ক্যাসক পরেছিলেন সেদিন; তাঁর সাদা পোশাক লাল রক্তে ভেসে গিয়েছিল। পাকিস্তানিদের হামলায় সেদিন চার্চ ক্যাম্পাসে ফাদার মারিও ভেরোনেসি, পল স্বপন কুমার বিশ্বাস, প্রকাশ বিশ্বাস, অনিল সরদার, ফুলকুমারী তরফদার, মাগদালিনা তরফদার, পবিত্র বিশ্বাস শহিদ হন।
মৃত্যুর সময় ফাদার মারিও ভেরোনেসির বয়স ছিল ৫৮ বছর। উনি যাজক হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সে, বাংলাদেশে বসবাস করেছিলেন ১৯ বছর। শিমুলিয়া ক্যাথলিক চার্চ প্রাঙ্গণে শায়িত আছেন আমাদের এই জন্মবন্ধু, যিনি নিজের জীবন দিয়ে গেছেন আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্মের জন্য…
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments