তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ফলে প্রতিমাসেই এলপিজি গ্যাসের দাম ওঠা-নামা করে। তবে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়ে অধিক মূল্য রাখার যে তোড়জোড় দেখা যায়, দাম কমলে মূল্য হ্রাসের সেই প্রয়োগ দেখা যায় না।
রোববার (২ এপ্রিল) গ্রাহক পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১১৭৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। বিশ্ববাজারে মূল্য কমেছে। ফলে এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। তবে মাঠ পর্যায়ে মূল্য হ্রাসের সেই প্রভাব দেখা যায়নি। গ্রাহককে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে আগের অতিরিক্ত দামেই।
সোমবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নতুন মূল্য নির্ধারণের পর ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ডিলার পয়েন্ট থেকে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের হাক্কানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম বলেন, সিলিন্ডার কেনাই পড়ছে ১২০০ টাকার ওপরে। তাহলে ১১৭৮ টাকায় বিক্রি করব কীভাবে?
অপর বিক্রেতা প্রগতি হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী শামসুল হক বলেন, এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো হলেও আমাদের তো কম দামে কেনা হচ্ছে না। তাই সরকারি দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, কেবল দাম কমানো নয়, ভোক্তা পর্যায়ে এর সুবিধা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।
লালমাটিয়া এলাকার বাসিন্দা সোহান মাহমুদ বলেন, সরকার দাম কমালেও সে দামে তো আমরা কিনতে পারছি না। নতুন দামের সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। দাম কমানোর পাশাপাশি সেটা বাস্তবায়নও নিশ্চিত করা জরুরি।
এলপিজি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলপিজি অপারেটর কোম্পানিগুলো যদি ডিলার পর্যায়ে কমিশনের পরিমাণ না বাড়ায়, তাহলে নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির প্রেসিডেন্ট সেলিম মিয়া বলেন, গতকাল পর্যন্ত (২ এপ্রিল) আমাদের সিলিন্ডার কেনা পড়েছে ১২০০ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচসহ সেটা আমাদের ১৩০০ থেকে ১৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এখন কোম্পানিগুলো যদি আমাদের সিলিন্ডার প্রতি সর্বনিম্ন ১২০ টাকা কমিশন দেয় তাহলে আমরা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করতে পারব।
বিইআরসির প্রশাসন ও আইন বিষয়ক সদস্য সচিব ব্যারিস্টার খলিলুর রহমান খান বলেন, বিশ্ববাজারে এলপিজি গ্যাসের কাঁচামালের দাম কমায় আমরা দেশে তার দাম কমিয়েছি। এখন প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, নির্ধারিত মূল্যে গ্রাহকরা গ্যাস কিনতে পারছেন না।
তিনি বলেন, বিক্রেতারা বলছেন তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অথচ আমরা এলপিজি গ্যাসের অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল্যটা নির্ধারণ করি। তাদের বলা হয়েছে যেন সঠিক মূল্যে গ্যাস বিক্রি করেন। আমরা ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি যেন সঠিক মূল্যে গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে আমাদের তদারকি থাকবে, যেন অধিক মূল্যে কেউ এলপিজি গ্যাস বিক্রি না করতে পারে।