আ.জা. ডেক্স:
করোনার কারণে আশানুরূপ হারে রাজস্ব আদায় হয়নি। অথচ স্বাভাবিক কর্মকা-ের ব্যয় মেটাতে ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিল থেকে বেশি মাত্রায় ধারদেনা করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে জুলাই-ডিসেম্বর ওই ৬ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকেও প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ ওসব উৎসের ঋণের বিপরীতে সরকারকে ভবিষ্যতে উচ্চমাত্রায় সুদ পরিশোধ করতে হবে। তাতে অর্থনীতি চাপে পড়বে। করোনার কারণে এভাবেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সরকার। নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। শতকরা হিসাবে আদায়ের পরিমাণ কম ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাছাড়া অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কাটছাঁট করে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে স্বভাবতই গত বছরের শেষ ৬ মাসে রাজস্ব কাক্সিক্ষত হারে আদায় হয়নি। মূলত আমদানি-রপ্তানির স্থবিরতায় রাজস্ব আদায় কমেছে। তাছাড়া রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটাল না হওয়ায় অনেকেই করমুখী হচ্ছে না। সব মিলে কাক্সিক্ষত হারে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে রাজস্ব আদায়। তবে গত ৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব কম আদায় হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় ব্যয় মেটাতে সরকার বেশি মাত্রায় ঋণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার জুলাই থেকে ডিসেম্বর ৬ মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। একইভাবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। অথচ চলতি বাজেটে ওই খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম ৬ মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর সরকারি ব্যয় সামাল দিতে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে জানুয়ারি থেকে জুন ওই ৬ মাসে ট্রেজারি বন্ড ও বিল থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারি ট্রেজারি বন্ড থেকে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বিল থেকে নেয়া হবে ৩০ হাজার ২০ কোটি টাকা। তার আগে গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেজারি বন্ড থেকে ২৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মতে, ধারণা ছিল নতুন বছরে মহামারি কেটে যাবে। অর্থনীতির গতি আসবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রাজস্বও। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বরং নতুন করে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যাবে। তাতে ব্যয়নির্বাহ করতে গিয়ে ঋণের ওপর আরো নির্ভরশীলতা বাড়বে। তাছাড়া বিদেশি ঋণ গ্রহণ কঠিন বিধায় অভ্যন্তরীণ ঋণের দিকে যাচ্ছে সরকার। চাইলে এখন সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। আর সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যাংক থেকে বেশি নিলে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণে বেশি সুদ দিতে হবে। তবে ঋণ গ্রহণ ছাড়া সরকারের বিকল্প নেই। সেজন্য এখন থেকেই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, বিশেষ করে কম ব্যয়ের পরিকল্পনা করা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কারণে তারল্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। সেটি না হলে ট্রেজারি বন্ড ও বিল থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ওই দুটি কারণে এই সময়ে কিছুটা সামাল দেয়া গেছে। তবে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে আরো চাপ সৃষ্টি হবে।