Friday, March 31, 2023
Homeস্বাস্থ্যকরোনায় ডায়ালাইসিস রোগীদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ

করোনায় ডায়ালাইসিস রোগীদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ

কিডনি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে এর ফল অত্যন্ত খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (সিকেডি) রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আর কিডনি ডায়ালাইসিসের রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে শতকরা ৫০ ভাগেরই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। ‘মাল্টিটিউড অব ইস্যুস ইন কোভিড: রেনাল, কার্ডিয়াক অ্যান্ড মেটাবোলিক ইনফ্লুয়েন্স’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ। এতে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

তারা বলেন, বিএসএমএমইউয়ের অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর একটি প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, কিডনি রোগীদের করোনা হলে তার ফল অত্যন্ত খারাপ হয়। বিশেষ করে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি অনেক থাকে। এমনকি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ।

বক্তারা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের শরীরে করোনার টিকার কার্যকারিতা অনেক কম। ডায়ালাইসিস রোগীদের শরীরে করোনার টিকার কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। এমনকি করোনার টিকা নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগমন ঘটাতে পারে বলেও জানান তারা।

অনুষ্ঠানে গবেষণার প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তাদের এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনায় পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের শতকরা ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং শতকরা ৩৪ ভাগ নার্সরা লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।

উপাচার্য বলেন, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসকদের গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। যেকোনো সময় কোভিডের সংক্রমণ হতে পারে, সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিম্পোজিয়ামে আরও জানানো হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ—এগুলো দীর্ঘমেয়াদী অসংক্রামক রোগ। করোনা ও নিউমোনিয়া সংক্রামক রোগ। করোনা হলে এই দুই ধরনের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটি রোগের দ্বারা অন্যটি প্রভাবিত হয়। তাই করোনা ও নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের করোনা জটিলতাও বেশিশ হয়।

সমীক্ষা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, করোনা রোগীদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগের ডায়াবেটিস আছে এবং এদের শতকরা ১৫ ভাগের চিকিৎসাধীন থাকার প্রয়োজন হয়েছে। কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়েও কিছু রোগী আমাদের কাছে আসছেন। তাকে পোস্ট কোভিড অথবা লং কোভিড সিনড্রম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে করোনা জটিলতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বার্ডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। 

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী। সিম্পোজিয়ামে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বার্ডেমের অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান ও অধ্যাপক ডা. এম আইয়ুব আলী চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments