উজান থেকে নেমে আসা যমুনার পানি ও অতিবৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রৌমারী ও ইলশামারী বিল এলাকার শত শত কৃষকের পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত শনিবার থেকে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাসহাঁটিয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হাশেম আলী। কষ্টার্জিত জমানো টাকায় ১২ বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলেন বোরো ধান।
আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে তার স্বপ্নের ধান। ওই গ্রামের শুধু হাশেম আলীর নয়। মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কাপাসহাঁটিয়া, শেখসাদি, টুপকারচর, ফকিরপাড়া, বেলতৈল, বাগবাড়ি, পূর্ব কাপাসহাটিয়া, তালুকপাড়াসহ ২০ গ্রামের স্থানীয় রৌমারী ও ইলশামারী বিলের আশপাশের কয়েক হাজার একর জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করেছেন শত শত কৃষক। তাদেরও মাথায় হাত পড়েছে।
আকস্মিক উজানের ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অতিবৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় এই ২০ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার জমির পাকা বোরো ধান পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকেরা। দিশাহারা এসব কৃষক যে যেভাবে পারছে ধান কাটার চেষ্টা করছে কিন্তু শ্রমিক আর নৌকা সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। আবার উৎপাদন খরচ না উঠায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন ধানের আশা। একই গ্রামের আরেক কৃষক হাকিম আলী বলেন, পানিতে তলানি ধান কাটার জন্যে দেড় হাজার টাকা দিয়েও কামলা পাওয়া যাইতাছে না।
যাগর একটু টাকা পয়সা আছে, খালি তারাই ধান কাটতাছে। যাগর টাকা নাই তারা আর ধান কাটতে পারতাছে না। আমরা খুব কষ্টে আছি। কৃষক জাকিউল ইসলাম বলেন, তলায় থাকা ধান কাটার পরে রাস্তা পর্যন্ত যে আনমু এহন নৌকা পাওয়া যাইতাছে না। এডা নৌকা আনবের গেলে এক ঘন্টার জন্যে এক হাজার টাকা দেওয়া লাগে। কামলা খরচ দিয়ে, নৌকা খরচ দিয়ে ধান কাইটে পুষাইতাছে না। তাই বেশিরভাগ ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাইতাছে। কাপাস হাঁটিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, সাত বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ পানিতে ডুবে গেছে পুরো জমির ধান। সেই সাথে ডুবেছে তার স্বপ্নও। ১৫’শ টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিক আর ঘন্টায় এক হাজার টাকার চুক্তিতে নৌকা ভাড়া নিয়ে দুই বিঘার ধান কেটে রাস্তায় তুলেছেন। বাকি ধান এখনও পানির নীচে ডুবে আছে। কৃষক আকবর আলী বলেন, আমরা যে ক্ষতির শিকার হইছি। এহন যদি সরকার আঙ্গরে সাহায্য না করে তাইলে সারা বছর আঙ্গর না খায়ে থাকা লাগবো। ঝাউগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকার বলেন, প্রতি বছর সাধারণত ধান কাটা শেষে আষাঢ়ের মাঝামাঝি বন্যা আসে। এ বছর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ যমুনার পানি ঢুকে পড়ে। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুত না থাকায় এ এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের আগেই যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরু চ্যানেল দিয়ে যমুনার পানি ঢুকে পড়ে এসব এলাকায়। ডুবে যায় আধা পাকা ও পাকা ধান। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা স্লুইচ গেট নির্মাণ করে এ এলাকাকে অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান তিনি।
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানান, মেলান্দহ উপজেলায় এ বছর ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ঝাউগড়া ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নেই আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর।
এসব বিষয়ে জামালপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাখাওয়াত ইকরাম বলেন বলেন, উজান থেকে নেমে আসা যমুনার পানি ও অতিবৃষ্টিতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রৌমারী ও ইলশামারী বিল এলাকায় আবাদ করা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
এতে ওইসব এলাকার কৃষকরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।