Tuesday, March 21, 2023
Homeজামালপুরজামালপুরে ইটভাটায় পুড়ছে লাকড়ি-কাঠ

জামালপুরে ইটভাটায় পুড়ছে লাকড়ি-কাঠ

জ্বালানি সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে চলতি ভরা মৌসুমে এখনো উৎপাদনে যেতে পারেননি জামালপুরের বেশিরভাগ ইটভাটার মালিক। তবে যেসব ভাটা চালু রয়েছে সেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

জেলা ভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে সদরে উপজেলায় একটি অটো ইটভাটা রয়েছে। চলতি মৌসুমে কিছু ভাটা চালু করা গেলেও জ্বালানি সংকটে বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে।

গত মৌসুমে ভাটা মালিকরা ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি কয়লা প্রতি টন ১৬-১৭ হাজার টাকায় কিনলেও চলতি মৌসুমে আমদানি সংকট রয়েছে। এরপরও যা পাওয়া যাচ্ছে তার জন্য টনপ্রতি ২৮-৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই ভাটা মালিকরা সময়মতো ইট উৎপাদনে যেতে পারছেন না। অনেকে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় দেখা যায়, ইটভাটার সামনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ভাটার সামনে সারিবদ্ধভাবে কাঁচা ইট বানিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে মাহিন্দ্রাযোগে আনা হচ্ছে লাকড়ি। কোনো কোনো ভাটার সামনে লাকড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

সদর উপজেলার আলফা অটো ব্রিকসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেছবাহুল কাইউম বলেন, ‘এটি জেলার একমাত্র পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকস শিল্প। এখানে শুধু কয়লা পুড়িয়ে ইট বানানো হয়। তবে কয়লার বর্তমান বাজার খুবই খারাপ। এখন প্রতি টন কয়লা কিনতে খরচ হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। তাও এ মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে।’

স্টার ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কয়লার দাম বেশি। আগে এক টন কয়লা কিনতে খরচ হতো ২৫-২৬ টাকা, এখন লাগে ৩০-৩২ হাজার টাকা। একটি ইট তৈরিতে খরচ পড়ে ১১-১২ টাকা। তাই অনেকে কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহার করছেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি তাতে ভাটা চালানোই দায়। ডলার সংকটে এলসিও করা যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে ভাটা চালানো সম্ভব হবে না।’
তানিম ব্রিকসের কর্মচারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক টন কয়লার দাম ৩০-৩২ হাজার টাকা। বর্তমানে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতি ইটে খরচ হবে ১৪-১৫ টাকা। এজন্য লাকড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত নাজ ইটভাটা। ভাটাটির স্বত্বাধিকারী সৌরভ মিয়া জানান, কয়লা সংকটে এখন পর্যন্ত ভাটা চালু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখন তৈরি করলে প্রতি ইটে খরচ হবে ১৫-১৬ টাকা। এজন্য তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, ‘কাঁচা ইট বানিয়ে রাখা হয়েছে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এখনো আগুন দিতে (আগুনে পোড়ানো) পারিনি। জ্বালানি মূল্য না কমলে কারও পক্ষেই ইটভাটা চালানো সম্ভব হবে না।’

উপজেলার আবির ইটভাটার শ্রমিক কামাল, হুমায়ুন কবির, আলহাজ, সুজন জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে এ ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে। কয়লা সংকটের কারণে লাকড়ি দিয়েই আগুন ধরানো হয়েছে। তারা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এখানে কাজ করছেন। উৎপাদনের ওপর মজুরি পান। তিন বছর আগে হাজারে ৫০০-৬০০ টাকা পেলেও এখন পান ৭০০ টাকা।

জামালপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান বলেন, জেলার বেশিরভাগ ভাটাই বন্ধ। এখনো কাজকাম শুরু হয় নাই। ভাটার মলিকরা বসে আছেন। ১০-১২টার মতো ভাটা চালু থাকলেও তাদের অবস্থাও নাজুক।

‘যে কয়টা ভাটা আছে সবগুলোতেই কয়লা পুড়িয়ে ইট হয়। কিন্তু বর্তমানে কয়লার ব্যাপক সংকট, ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম অনেক বেশি। গতবার এক টন কয়লা কিনতে খরচ হতো ১৬-১৭ হাজার টাকা। এ মৌসুমে খরচ করতে হচ্ছে ২৮-৩০ হাজার টাকা। এ কারণে মালিকরা ভাটা চালু করতে সাহস পাচ্ছেন না’, যোগ করেন জাকির হোসেন।

জাকির হোসেনের ভাষ্য, ‘দাম বেশি হওয়ায় ইটের বিক্রি অনেক কমে গেছে। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দাম নেই। কয়লা যে দামে কেনা হচ্ছে সেভাবে ইটের দাম বাড়ছে না।’

কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইট বানানোর জন্য লাকড়ি চলে না। তবে দু-চারজন তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এটি ব্যবহার করছেন। কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহার করলে ইটের রং ভালো হয় না, মান ঠিক থাকে না। যেহেতু কয়লার সংকট সেহেতু অনেক সময় লাকড়ি দিয়ে আগুন ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।’

জামালপুর পরিবেশ আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলায় প্রায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ-খড়ি পোড়ানো হয়। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে ইটের মান ঠিক থাকছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উচিত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।

ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) দিলরুবা আহমেদ বলেন, ১০-১২ দিন আগে জেলার ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিভাগে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কিছু ইটভাটা ভাঙাও হয়েছে। এ অভিযান ভবিষ্যতে চলমান থাকবেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments