জামালপুর: আছিয়া খাতুনের ৪ জনের পরিপাটি সংসার। স্বামী ও নিজে জমিতে কৃষি কাজ করে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করে আসছিলেন।হঠাৎ যমুনার ভাঙনে তছনছ হয়ে গেছে সেই সুখের সংসার।
২৪ ঘণ্টার ব্যাবধানে ১ একর আবাদী জমি, ভিটাবাড়িসহ সবই চলে যায় যমুনার গর্ভে। সন্তান নিয়ে এখন থাকেন প্রতিবছর ২ হাজার টাকা ভাড়ায়।
নদীর কিনারে ঘাস, সবজি চাষ করেন আছিয়া। অভাবের তাড়নায় স্বামী রুহুল আমিন এখন দিনমজুর। হাতে কাজ না থাকলে চলে যান ঢাকায়। নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলো বর্তমানে সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এমফরসি প্রকল্পের মাধ্যমে ভুট্টা, গবাদী পশু ও শাক সবজির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নদী ভাঙনের শিকার সাজেদা, লাইলী, হাফিজা, রাহেলা, মমতা, নার্গিস, রমিছাসহ আরও অনেকেই।
তারা জানান, আগে ৩৩ শতাংশ জমি চাষ করে ২০ মণ ভুট্টা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন উন্নত মানের পদ্ধতি অনুসরণ করায় একই পরিমাণ জমিতে ৪০ মনেরও বেশি ভুট্টা পাওয়া যায়। এতে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে।
এছাড়া মানুষ ছাগল ও গরুও পালন করেন নদীভাঙনের শিকার এসব মানুষ। মোটাতাজা করণ প্রকল্পে মাত্র ৩ মাসেই প্রতিটি গরুতে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়। ফলে নদী ভাঙনে শিকার মানুষগুলো বাঁচার স্বপ্ন দেখলেও সব সময় আবারও ভিটা হারানোর আতঙ্কে থাকেন।
নদীভাঙন আতঙ্কে বাস করেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ীর যমুনা তীরে বসবাসকারীরা। তারা জানান, যমুনার তীব্র ভাঙনে চিকাজানী ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ড এখন বিলীন হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে এখানে ৫ কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার একর জমি যমুনার গর্ভে চলে গেছে। পথে বসেছে ৩ হাজারেও বেশি পরিবার। নদীভাঙনের কারণে চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী, ফারাজীপাড়া, বরখালসহ ১৫টি গ্রামের এখন অস্তিত্ব নেই।

এছাড়া হাজরাবাড়ী, চর মাগুরী হাট, মণ্ডল বাজার, প্রায় ১০ কোটি টাকা বায়ে নবনির্মিত বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা ও দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী প্রধান সড়কও যমুনার ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল হালিম, আব্দুল ছালাম, ইসমাইল হোসেন, হাফিজুর রহমানসহ স্থানীয়দের দাবি তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করে এ নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, খোলাবাড়ী এলাকায় যমুনার ভাঙন তীব্র। প্রতিবছর এখানে নদী ভাঙে, কিন্তু সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, তীর সংরক্ষণ বাঁধের বিষয়টি দেখভাল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ বিষয়ে তারাই বিভিন্ন প্রকল্প নেয়। চিকাজানীর খোলাবাড়ী নদীভাঙনের বিষয়ে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছি কিনা এ বিষয়ে জানা নেই।