চারিদিকে কনকনে শীত। সূর্যের দেখা নেই। শীত উপেক্ষা করে একদল যুবক ছুটে চলেছেন খেজুরের রসের সন্ধানে। খুব ভোরে এ দৃশ্য সাধারণত যশোর, কুষ্টিয়া এবং ফরিদপুরে দেখা গেলেও এবার দেখা মিলেছে জামালপুর জেলায়।বুধবার (২৮) ভোরে জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার অদূরে সরিষাবাড়ী-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পপুলার জুট মিল সংলগ্ন ইজারাপাড়া এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখা যায়, পৌষের শীতে চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ২০-৩০ বছর বয়সী শতাধিক যুবক মোটরসাইকেল, সিএনজি এবং অটোরিকশাযোগে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য ভিড় জমিয়েছেন। কয়েকদিন ধরেই তারা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন। কেউ এই প্রথম, কেউবা আগেও এসেছেন কয়েকবার। লাইনে দাঁড়িয়ে তারা খেজুরের রস খাচ্ছেন। যারা প্রথমবার এসেছেন তাদের কাছে এ এক অন্যরকম অনুভূতি। খেজুরের রস খেতে কাকডাকা ভোরে শাকিল, কৌশিক, সাদ্দাম, মাঈনুল, লামসহ আরও অনেকে এসেছেন ইজারাপাড়া এলাকায়। গাছ থেকে রস পাড়ছেন গাছি, এ সুযোগে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছেন তারা। কথা হলে তারা জানান, শীতকালে বাঙালিদের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস। প্রতিবছর এ মৌসুমে এখানে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন খেজুরের রস খেতে। কারণ এটিই জেলার একমাত্র স্থান যেখানে গুণে, মানে এবং স্বাদে অতুলনীয় রস পাওয়া যায়। এ রস শুধুমাত্র ভোরেই ভালো লাগে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের স্বাদ কমে যায়। ষাটোর্ধ্ব হবিবুর রহমান হবি এলাকার একমাত্র গাছি। ভোর থেকেই ব্যস্ততা বাড়ে তার। কথা বলার সময় নেই। গাছ থেকে রস পাড়া থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি নিজে করেন। গত ২২ থেকে ২৪ বছর ধরে তিনি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। কথা হলে তিনি বলেন, গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামাতে দেরি কিন্তু হাঁড়ি শেষ হতে দেরি হয় না। সকাল ৮টার ভেতরে শেষ হয় রসের হাড়ি। বহু দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এখানে। কয়েকদিনের শীতে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। তিনি জানান, মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেওয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি। সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে তিনি দৈনিক গড়ে ২০-২৫ লিটার রস সংগ্রহ করেন। আগে এক লিটার রস বিক্রি করতেন ৭০ টাকা, এখন বিক্রি করছেন একশ টাকা। তারপরও দিনদিন চাহিদা বেড়েই চলেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেলে-দোআঁশ মাটি দেশীয় জাতের খেজুর গাছ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড়, ক্ষেতের আইল এবং আবাদি জমিতে খেজুর গাছ বেশ ভালো জন্মে। এ অঞ্চলে কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রবণতা খুবই কম। সাধারণত উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা খেজুরের গাছ বেশি চাষ করেন। পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদাভাবে জন্মে। স্ত্রী গাছ থেকে ফল ও রস দুটিই পাওয়া যায়। পুরুষ গাছ থেকে শুধু রস পাওয়া যায়। উপজেলার ইজারাপাড়া এলাকায় খেজুরের রস খাওয়ার জন্য কাকডাকা ভোরে লোকজন ভিড় করার বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছেন। এমন আগ্রহ ভবিষ্যতে খেজুর চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াবে বলেও জানান তিনি।