এম.এ. রফিক: জামালপুর জেলার বিভিন্ন মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো জেলার প্রতিটি মাঠজুড়ে কেবল চোখে পড়ছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। এই শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে। শুক্রবার জামালপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গেলে এমনি চিত্র দেখা যায়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠগুলো। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালি, কখনো বা হলুদ। এমনি ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে এ জেলার ফসলের মাঠ। সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে- দোঁআশ মাটিতে বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ অঞ্চলে সরিষা বেশি আবাদ হয়। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় ধীরে ধীরে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুণ গুণ করছে। চলছে মধু আহরণের পালা। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। তাদের সাথে দূর দুরান্ত থেকে এসেছেন মৌয়ালীরা মধু সংগ্রহ করতে। মৌয়ালীরা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর প্রতি সপ্তাহে একেকটি বাক্স থেকে প্রায় তিন থেকে চার কেজি মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। যার প্রতি কেজি বাজার মূল্য ৪শত টাকা। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। হেমন্তকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে সরিষা ও শীতকালীন সবজি মাঠের শোভা বর্ধন করছে। কৃষকরা বলেন, গত কয়েক বছর যাবত এ জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে সরিষা আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করি লাভও ভালোই পাওয়া যাবো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর ২৭ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। অর্জিত হয়েছে ৩২ হাজার ৫শ হেক্টর। গত বছর নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২২ হাজার ৫শ হেক্টর, অর্জিত হয়েছিলো ২৩ হাজার ৪’শ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষি বেশি মুনাফা লাভ করবে। চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগই ফুল এসে গেছে এদিকে চলমান ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে শীতের স্থায়ীত্ব কমে আসে তাহলে আবাদে কোনো প্রভাব পড়বে না। সরিষা রোপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ চাষ করা যায় বলে একে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এ বিষয়ে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, সদরে সরকারের প্রনোদনায় প্রায় ১৫শ কৃষকের মাঝে বিনামূলে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ বছর আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সম্পূরক রবি শস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই ফুল এসে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার সরিষা আবাদি কৃষকরা বাড়তি মুনাফা পাবে বলে মনে করছি।