Friday, September 29, 2023
Homeজাতীয়টেন্ডার পেতে ইউএনও’র চিঠি জাল করলেন ছাত্রলীগ নেতা

টেন্ডার পেতে ইউএনও’র চিঠি জাল করলেন ছাত্রলীগ নেতা

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় টেন্ডার ভাগিয়ে নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) চিঠি জাল করার অভিযোগ উঠেছে কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও শেখ লুৎফর রহমান কলেজের সাবেক ভিপি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনের বিরুদ্ধে। 

চিঠি জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)  ফেরদৌস ওয়াহিদ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের দোষ স্বীকার করে ইউএনও বরাবর লিখিত একটি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। 

জানা গেছে, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করার লক্ষে সড়কের দুই পাশের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কর্তনের জন্য গত ১০ এপ্রিল সামাজিক বন বিভাগের ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিটি কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন সুকৌশলে সংগ্রহ করে সামাজিক বন বিভাগের ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নামের স্থলে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ বসিয়ে একটি জাল চিঠি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায়। চিঠিটি গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের হাতে পৌঁছানোর পরে তিনি ওই চিঠি সম্পর্কে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চায়। 

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ ওই চিঠিটি জেলা প্রশাসক এর কাছে পাঠায়নি বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকে জানায়। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের নির্দেশে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ তদন্ত শুরু করলে কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনের চিঠি জাল করার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
 
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত  ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন জাল চিঠির দায় স্বীকার করে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে লিখিত একটি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
 
এ বিষয়ে কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন বলেন, বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। তাই আমি দোষ স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়েছি।
 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করার লক্ষে সড়কের দুই পাশের কোটালীপাড়া অংশের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কর্তনের জন্য ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে ৭১ লাখ ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ওই গাছগুলো টেন্ডার দিতে হলে মূল্য বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমার দপ্তর থেকে ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন ওই চিঠিটি জাল করে গাছের টেন্ডারটি নিজের নামে ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে একটি জাল চিঠি দেয়। চিঠিটি জাল প্রমাণিত হওয়ার পরে চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তার এই মুচলেকার কপিসহ আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন তার পদ পদবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে নানা সময়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হালে তার মাধ্যমে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হবে।
 
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন দোষী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments