রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় আজ (শুক্রবার) সকালে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দোহারে। ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ এই অবস্থানেই অর্থাৎ দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।
শুক্রবার (৫ মে) ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে জানান বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্বে। যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এর আগে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এ ধরনের ছোট ছোট ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ঢাকায় যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে।
আজকের (শুক্রবার) ভূমিকম্পের মতো ঢাকার আশেপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে।
একটি গণমাধ্যমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, আমরা ২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত গ্রীষ্মের সময় ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখেছি।
ভূমিকম্প শনাক্তকারী সংস্থা আর্থকোয়েকট্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৮ মার্চ এই অবস্থানেই দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।
ঢাকার কাছাকাছি অবস্থানের ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত বিশ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ১২ কিলোমিটার পূর্বে ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।
আর্থকোয়েকট্র্যাক থেকে ২০০৮ এ টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ও ২০১৯ সালে মির্জাপুরে চার মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া গত ১৫ বছরে নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। ঢাকার কাছে ফরিদপুরেও গত ১৫ বছরের মধ্যে দুইবার চার মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পকে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।
ভূতত্ববিদদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে।