সীমান্ত দাস : মৌলভী ইনসান আলী সরকারের পুত্রটি একাত্তরে জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর পূর্বে (২৫ জুলাই রোববার, ১৯৭১) আল বদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব কমান্ড বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রধান সংগঠক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামরুজ্জামান, আনুমানিক সকাল ৭ টার দিকে নালিতাবাড়ী ও শেরপুর এলাকার স্থানীয় রাজাকার নেতা বল্লু, বকা বুড়া, নসা ও কাদির ডাক্তার পাকিস্তানী হার্মাদদের নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সোহাগপুর ও বেনুপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে।
এরপর শুরু হয় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞের নৃশংস ঘটনা। গ্রাম দু’টির নিরীহ বাসিন্দা রমেন, রাসেল, মিরিশ গাব্রিয়েল, মন্তাজ আলী, শহীদ আলী, আবুল বাশার ও হাসেম আলী, সফিউদ্দিন, কিতাব আলী, মোন্নাস আলী, মোহাম্মদ আলী, মমিন মিয়া, কুটুমউদ্দিন, রজত আলী, ঈমান আলীসহ ২৪৫ জনকে হত্যা করা হয়।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র সোহাগপুর গ্রামেই ১৮৭ জনকে হত্যা করা হয় এবং ১৭০ জন নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়। (সেদিন থেকে ৫৯টি গণকবরের সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত)। এদিনের নৃশংস গণহত্যা শেষে গণহত্যা শেষে এরা ‘ফতোয়া’ ঘোষণা করেছিল নিহতরা কাফের। তাই কারও লাশ দাফন করা যাবে না। অসহায় মানুষগুলোর আপন স্বজনের লাশ পরিণত হয় শেয়াল কুকুরের খাদ্যে।
সোহাগপুর, শ্রুতিমধুর নামটি পরিণত হয়েছে গভীর শোক আর দুঃখগাঁথার ইতিহাসে। একাত্তরের মতো বিশাল ক্যানভাসে ‘স্বাধীনতা’ শিরোনামের অমূল্য ছবিটি আঁকা হয়েছে ত্রিশ লক্ষাধিক শহীদের রক্তে। আত্মবিস্মৃত জাতির স্মরণে নেই আজ।
একাত্তরে আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ভূখ- পরিণত হয়েছিল জল্লাদখানায়, অগণিত বধ্যভূমি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি স্থানে। পাঁচ দশক পেরিয়ে যাবার পরেও সেই ‘যন্ত্রণা-হাহাকার’ আজও প্রচ-ভাবে সতেজ।
স্বাধীনতা, শব্দটি এত সস্তা নয়, নয় এত তুচ্ছ। বাংলার বাতাসে তাঁদের আর্তনাদ, আমরা কি শুনতে পাই? আমাদের কি, সেই হাহাকার অনুভবের হৃদয় আছে ? আমাদের কি, সেই আর্তনাদ শোনার মতো কান আছে ?