Thursday, March 23, 2023
Homeআন্তর্জাতিকপাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সহকারী পুলিশ সুপার

পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সহকারী পুলিশ সুপার

মনীষা রূপেতা হলেন প্রথম হিন্দু নারী যিনি পাকিস্তানে সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসপি) হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। সিন্ধু পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশিক্ষণ শেষে এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি।

মনীষা বড় হয়েছেন পাকিস্তানের পশ্চাৎপদ ছোট একটি জেলা জাকুবাবাদে। সেখান থেকেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। তার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মনীষার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন মারা যান তার বাবা।


মনীষার মা একাই পাঁচ সন্তানকে বড় করেছেন। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক সময় তিনি করাচিতে চলে যান। জাকুবাদের জীবনের কথা স্মরণ করে মনীষা বলেন, মেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ সেখানে নেই।

যদি কোনো মেয়ে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয় তবে তাকে কেবলমাত্র মেডিকেল শিক্ষার জন্যই উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।

মনীষার তিন বোন এমবিবিএস ডাক্তার, আর তার একমাত্র ও ছোট ভাই মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করছে।

মনীষাও চিকিৎসক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু নম্বর কম থাকায় এমবিবিএসে ভর্তি হতে পারেননি। এরপর তিনি ফিজিক্যাল থেরাপি নিয়ে পড়াশোনা করেন।

এক সময় কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি সিন্ধু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তিনি এ পরীক্ষাতে কেবল অংশই নেননি, পরীক্ষা ১৬তম স্থানও লাভ করেন তিনি।

পাকিস্তানে নারীরা সাধারণত পুলিশ স্টেশন ও আদালতের ভেতরে যান না। এই জায়গাগুলো নারীদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয় না, তাই প্রয়োজনের সময় পুলিশ স্টেশন বা আদালতে যাওয়া নারীরা পুরুষদের সাথে আসেন। এমন আবহে মনীষা কীভাবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মনীষা বলেন, ভালো পরিবারের মেয়েরা থানায় যায় না, এই ধারণাটা বদলাতে চাই।

তিনি বলেন, আমি সবসময় পুলিশের পেশার প্রতি আগ্রহী ছিলাম। আমি মনে করি এই পেশাটি নারীদের মর্যাদাকে শক্তিশালী করে।

তিনি আমাকে আরও বলেছিলেন যে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল পুলিশের পেশাকে মহিলাদের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করা।

মনীষা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নারীদের সুরক্ষার জন্য নারীদেরই প্রয়োজন। এ কারণেই আমি সব সময় পুলিশ বাহিনীর অংশ হতে চেয়েছি।


ডিএসপি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া আগে মনীষাকে করাচির সবচেয়ে দুর্গম এলাকা লিয়ারিতে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। মনীষাই প্রথম নারী যিনি ওই এলাকার পুলিশ বিভাগে অফিসার হয়েছেন।

তিনি এএসপি আতিফ আমিরের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নেন। আমির মনে করেন, নারী পুলিশ অফিসারদের সংখ্যা বাড়লে তা পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি বদলাতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, এর ফলে পুলিশের মানবতাবিরোধী যে প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছে, তা মুছে ফেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। মনীষার মতো পুলিশ অফিসাররা সমাজে পুলিশের একটি ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে।

অনেক সময় দেখা যায় নারী সাক্ষীরা হাজির হতে চান না, আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হতে চান না, কারণ তাদের বারবার পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। যদি আরও বেশি সংখ্যক নারী পুলিশ থাকে, তাহলে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।



তবে মনীষার আশপাশের মানুষরা মনে করেন এ চাকরি তিনি বেশিদিন করতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে মনীষা বলেন, আমার সাফল্যে আমার কাছের মানুষরা খুব খুশি হয়েছিল। গোটা দেশ আমার প্রশংসা করেছে, সবার কাছ থেকে প্রশংসা শুনেছি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ঘটনাও ঘটেছে। আমার নিকটাত্মীয়রা বিশ্বাস করেন যে আমি অল্প সময়ের মধ্যে আমার চাকরি পরিবর্তন করব।

এমন ধারণার কারণ কী তা বোঝার চেষ্টা করছেন মনীষা। তিনি বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা মনে করেন যে, কেবল পুরুষরাই এই কাজগুলো করতে পারে। এটি একটি চিন্তার দৃষ্টিকোণ হতে পারে। কিন্তু আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পরিবর্তন আসবে বলে আশা তার।


চাকরির পাশাপাশি মনীষা পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি একাডেমিতে শিক্ষকতা করেন।

তিনি বলেন, এটা আমার জন্য খুব অনুপ্রেরণাদায়ক, কারণ আমি মনে করি আমার দিকনির্দেশনা কিছু মেয়েকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে।

আগামী দিনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আরও বেশি সংখ্যক নারী পুলিশ বিভাগে যোগ দেবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments