জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু : জামালপুরের বকশীগঞ্জে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসত ভিটা সহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বকশীগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদীর তীরবর্তী এলাকার ৫ টি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। বর্ষার শুরুতেই নদী ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর তীরবর্তী বাংগাল পাড়া, কুতুবের চর গ্রামে দেড় কিলোমিটার ভাঙন ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা , ফকির পাড়া গ্রামে ২ কিলোমিটার নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। নদী ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবার বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।
প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবার গুলোর। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।
বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবেরচর ও বাংগাল পাড়া গ্রামে জিঞ্জিরাম নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এই গ্রামের কৃষক আবদুল মাজিদ জানান, এ পর্যন্ত তিনি নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিন বার বসত ভিটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বার বার ভাঙনের ফলে তিনি এখন অনেকটাই নি:স্ব। এবার চতুর্থ বারের মত বসত ভিটা সড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবদুল মাজিদ।
আবদুল মাজিদের মত ওমর আলী, আবদুল আজিত, পানফুল, রাজু মিয়া, ফজলু মিয়া ও নুর আলমের সত অনেকেই ভানের শিকার হয়ে ঘর বাড়ি অন্যত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন।
শুধু বসত ভিটায় নয় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙনে কুতুবের চর জামে মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে কুতুবরে চর গ্রামের রাস্তাটিও । যেকোন সময় বিলীন হতে পারে কুতুবের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় নুরুল ইসলাম জানান, গত তিন বছরে এই গ্রামের প্রায় ৩ শ হেক্টর ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে খুব শিগগিরই কুতুবের চর গ্রামটি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।
কলেজ শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম জানান, জিঞ্জিরাম নদী বাংগাল পাড়া ও কুতুবের চরকে গিলে খাচ্ছে। এসব গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থায় নিচ্ছে না। ফলে আমরা ভাঙন আতঙ্কে হতাশার মধ্যে রয়েছি।
স্থানীয় এলাকাবাসী ভাঙন রোধে দ্রুত পাইলিং, জিও ব্যাগ ফেলানো ও বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে ৫০০ জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুত জিও ব্যাগ গুলো ভাঙন কবলিত জায়গায় ফেলা হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা করা হয়েছে। এছাড়াও যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।