বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চাম্পাইসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার (১৩ মার্চ) ভোরে বান্দরবান সদরের টংকাবতী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
আটককৃতরা হলেন- কুমিল্লার আব্দুর রহিমের ছেলে মো. দিদরি হোসেন ওরফে মাসুম চাম্পা (২৫), নারায়ণগঞ্জ সদরের মো. ইউনুস সর্দারের ছেলে আল আমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ আবাই (২৯), ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের মো. আবুল কালামের ছেলে সাইনুন ওরফে রায়হান হুজাইফা (২১), সিলেট বিয়ানিবাজারের কামাল আহম্মদ চৌধুরীর ছেলে তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল রিতেং (১৯), সিলেটের শাহপরানের আব্দুল কাদিরের ছেলে মো. লোকমান মিয়া (২৪), কুমিল্লার লাকসামের মৃত আব্দুল আজজের ছেলে মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল শান্ত (৩৫), ঝিনাইদহ কোর্টচাদ পুরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আমির হোসেন (২১), বরিশাল সদরের ফারুক হাওলাদারের ছেলে মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮), ময়মনসিংহের ফুলপুরের মো. গিয়াসউদ্দিনের ছেলে শামিম মিয়া ওরফে রমজান বাকলা (২৪)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, তথাকথিত হিজরতের নামে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ঘটনায় তরুণদের পরিবার কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা কতে গিয়ে র্যাব জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় ও র্যাব জানতে পারে এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্রগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে গত বছরের ৩ অক্টোবর বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। পরবর্তীতে এই বছরের ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে প্রশিক্ষণরত ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রণবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ব্রিজ এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও নগদ সাত লক্ষাধিক টাকাসহ জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সাল থেকে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘বম’ সম্প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে তাদের আশ্রয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় সমতল থেকে আসা নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বেশ কিছু সদস্য। তাদের নির্মূলে গত বছরের অক্টোবর থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এ অভিযানে এ পর্যন্ত মোট ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে কেএনএফ-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্য রয়েছেন।