Friday, September 29, 2023
Homeজামালপুরবালাই নাশক ব্যবহারে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে জামালপুরে

বালাই নাশক ব্যবহারে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে জামালপুরে

বালাই নাশক ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষের আগ্রহ বাড়ছে জামালপুরের মেলান্দহে কৃষকদের মাঝে। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় ১শ’ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম) বা সমন্বিত বালাই নাশক পদ্ধতিতে দেশের ২০ ইউনিয়নের আওতায় মেলান্দহের শ্যামপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কৃষকদের মাঝে পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প চালু করেছে। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ জন করে ২০ গ্রুপের মোট ৫০০ কিষাণ-কিষাণী এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন। এর  প্রায় ২০০ নারী বাকিরা পুরুষ। ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মধ্যে এটি পরিবেশবান্ধব সর্বশেষ-সময়োপযোগী আধুনিক পন্থা। আর পদ্ধতির জন্য প্রত্যেক কিষাণ-কিষাণীদের পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, কীটনাশক মারণাস্ত্র ফেরোমিন, ফাঁদ, ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট-জৈব সার, নেট হাউজ, মানচিং শিট, প্রযুক্তিসহ আনুসাঙ্গিক সহযোগীতা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এই প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন স্থানীয় ভূমিহীনরা। এতেই শেষ নয়, সবজির বাজারজাতকরণের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক ভ্যান গাড়ি এবং পরিমান মতো ২৫ করে ক্যারেট (খাঁচা জাতীয়) দেওয়া হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে- বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করল্লা চাষা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও কৃষকদের নিজ প্রয়োজনে তরমুজ, রঙ্গিন তরমুজ ছাড়াও আরও চার জাতের স্কোয়াশ, তিন জাতের ক্যাপসিক্যাম, লাল ঢেঁড়স, নতুন নতুন জাতের ফুলকপি, লাল শাক, পাট শাক, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি চাষ করছেন কৃষকরা।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৩ সাল থেকে সবজির চাষাবাদ করছি। খরচপাতি বাদে আমার অনেক লাভ থাকে। এবারও সাড়ে চার বিঘার জমিতে সবজির চাষ করছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে বিনামূল্যে বীজ-সার পেয়েছি। খরচও কমেছে। এবারের ফসলে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলনেরও কমতির সম্ভাবনা দেখছি না।

শ্যামপুর গ্রামের কৃষক দিদারুল আলম বলেন, সারা বছর সবজির চাষে খরচের পর ৭০ হাজার টাকা থাকে। এই টাকায় প্রতিবছর আমি গরু ক্রয় করি। সবজির ক্ষেতেই প্রচুর ঘাস হয়। এই ঘাস গরুর খাদ্যের চাহিদাও মেটে।

কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন- অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার চাষে খরচ কম হয়েছে। সার-কীটনাশক দিতে হচ্ছে না। কৃষি অফিস একধরনের ফাঁদ এবং তাবিজ জাতীয় পানির পাত্র দিয়েছে। এই কেরামতিতে সব পোকামাকড় ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়।

কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানান, পোকামাকড়ের জেনিটিক আচরণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রংয়ের ফাঁদ আবিষ্কার করেছে কৃষি বিভাগ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কীটনাশক মারণাস্ত্র ফেরোমিন, ফাঁদ, নেট হাউজ, মানচিং শিট। পোকামাকড়ের আকৃষ্টকারী হলুদ, লাল, কালো ফাঁদে একধরণের আঠা থাকে। সেই আঠাতে বসলেই পোকামাকড় মারা যায়। আরও মজার বিষয় হচ্ছে- সবচি ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য একটি পাত্রে কেমিক্যালের তৈরি (কৃষকের ভাষায় তাবিজ) ফেরোমিন রাখা হয়। ফেরোমিনে নারী পোকার গন্ধ ছড়ায়। প্রজননের জন্য পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ফেরোমিনের পাত্রে প্রবেশ করেই পানিতে পড়ে মারা যায়।

তিনি জানান, মানচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে ফসলে আগাছা হয় না। ক্ষেতে পানিরও সংকট পড়ে না। মানচিং হচ্ছে বপনকৃত বীজের স্থান উন্মুক্ত রেখে বাকি জমি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকলে নেট দিয়ে ক্ষেতের চারদিকে ঢেকে দিতে হয়। বিষমুক্ত সবজি কিংবা ফসলাদি পেতে এই পদ্ধতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments