রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘মেইনটেনেন্স অব ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ বৈঠকের সভাপতির ভূমিকায় থাকায় নিন্দায় মুখর হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় বিভিন্ন মিত্র দেশের কূটনীতিকরা।
অন্যদিকে নিজের দীর্ঘ বক্তৃতায় ল্যাভরভ যা বলেছেন, তার সারবস্তু হলো—বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন এবং সেজন্য প্রধানত দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের মূল কার্যালয়ে হয়েছে এ বৈঠক।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৫ জন। এই সদস্যদের মধ্যে ৫টি রাষ্ট্র স্থায়ী, বাকি ১০টি অস্থায়ী।
স্থায়ী সদস্যরা হলো— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীন। নিরাপত্তা পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী— পরিষদের সভা আহ্বান ও অন্যান্য নির্বাহী কাজ সম্পাদনের জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে থেকে একজন সভাপতি (কনভেনার) হবেন এবং এক মাস পর পর এই পদে বদল আসবে। চলতি মে মাসে পরিষদের সভাপতির পদে আছে রাশিয়া। সেই সুবাদেই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন সের্গেই ল্যাভরভ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সোমবারের বৈঠকের শুরুতেই ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর আগ্রাসন কেবল জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থীই নয়, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে যে বিপর্যয় চলছে— তাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এই আগ্রাসন।’
তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বৈঠকে নিজ বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের ভণ্ডামিপূর্ণ কনভেনার রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেন আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ সনদের মূলে আঘাত হেনেছে। অবৈধ, অপ্রয়োজনীয় ও বিনা উসকানিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ জাতিসংঘের অধিকাংশ মূল নীতির পরিপন্থী। এ কারণে এই আগ্রাসন এবং (তার মাধ্যমে) ইউক্রেনের ভূমি দখল করা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
‘আমরা যখন এখানে বসে বৈঠক করছি, সেসময় ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর গোলার আঘাতে ইউক্রেনে হতাহত হচ্ছে সাধরণ বেসামরিক মানুষ। ইউক্রেনের অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে; বুচা-মারিওপোল-খেরসনের মতো নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়ছে দেশটির বিভিন্ন শহরে,’ যোগ করেন তিনি।
নিরাপত্তা পরিষদের দুই ইউরোপীয় সদস্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের দূতরা কিছু বলেননি, তবে বৈঠক শুরুর আগে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জাতিসংঘ প্রতিনিধি ওলাফ স্কুগ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া নিজেকে জাতিসংঘের সনদ ও বহুমত সহনশীলতার রক্ষক হিসেবে হাজির করতে চাইছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে রাশিয়া ধ্বংস করে, আর আমরা সৃষ্টি করি; রাশিয়া আইন লঙ্ঘণ করে, আমরা তা রক্ষা করি।’
এসব নিন্দা বক্তব্যের জবাবে কনভেনারের বক্তৃতায় ল্যাভরভ বলেন, ‘শীতল যুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কারণে একাধিকবার বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সেই যুদ্ধ অবসানের পর সেই হুমকির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ এবং সেজন্য পশ্চিমা দেশগুলো এককভাবে দায়ী।’
‘পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার নিন্দায় মুখর হয়ে উঠেছে— কিন্তু এ পর্যন্ত তারা ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ডের স্বীকৃতি দেয়নি। ইউক্রেন ক্ষমতাসীন নাৎসী শাসকদের সমানে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে এই যুদ্ধকে জিইয়ে রেখেছে পশ্চিমারা,’ নিজ বক্তব্যে বলেন ল্যাভরভ।
সূত্র : সিএনএন