ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফোরামের আয়োজনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৩ জুন) ‘পোস্ট বাজেট ডায়ালগ ফিসকাল ইয়ার ২০২৩-২৪’ শিরোনামে এ আলোচনা সভায় অংশ নেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইপিডিসি ফিনান্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম এবং স্নেহাশিস মাহমুদ অ্যান্ড কোং এর পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবারের বাজেটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রণীত বাজেট হিসেবে উল্লেখ করেন আলোচকবৃন্দ। এই বাজেটে ইতিবাচক অনেক কিছু রয়েছে তবে বাজেট বাস্তবায়ন করাটাই সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তারা।
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিকভাবে বাজেটের আকার মোটেই বড় নয়। জিডিপির আনুপাতিক হারে বাজেট ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। আকার ছোট হলেও বাজেটের বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জের বিষয়।
এছাড়াও জনগণের ওপর করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রয়েছে, কর দেয় এর চেয়ে অনেক কম। এক্ষেত্রে টিআইএন ধারীদের কর নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কর নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অনেক রূপকল্পের কথা বলা হয়েছে। আছে নানা অর্জন আর প্রত্যাশার কথা আছে। কিন্তু কোনো বিষয়েই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ড. সালেহউদ্দিন বলেন।
তিনি বলেন, ব্যক্তি করমুক্ত আয়ের সীমা যেটা সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু দুই হাজার টাকা যা মিনিমাম কর ধরা হয়েছে এটা কেন? রিটার্ন দিলেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে।
এটাকে আমার সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে। সেই সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ, আদায়, বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি হ্রাস এবং বিদেশ পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
অনেক চ্যালেঞ্জকে ভারসাম্য করেই সরকারকে এবারের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে বলে মনে করছেন আইপিডিসি ফিনান্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন।
তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা রাস্তা-ঘাটসহ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চাই সেই সাথে একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশে সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, বিচার ব্যবস্থার উন্নতিসহ একটি ব্যবসা সহায়ক পরিবেশও চাই।
এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টর যেহেতু সবসময়ই রাজস্ব আহরণে সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে তাই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের নিকট থেকে সহায়তা পায় সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বাজেট পরবর্তী এই আলোচনা অনুষ্ঠানে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন এর গুরুত্ব, কার্যকরভাবে রাজস্ব আদায়ের কৌশল এবং ইনকাম ট্যাক্স আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং এর পার্টনার স্নেহাশিস বড়ুয়া।
আলোচনা শেষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অতিথিরা। বাজেট পরবর্তী এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সিনিয়র লেকচারার তানিয়া আকতার।