Friday, June 9, 2023
Homeজাতীয়ভাই-বোনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান প্রশ্নে

ভাই-বোনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান প্রশ্নে

সীমান্ত দাস : বোন টিক্কা খানকে সাধুবাদ জানান গণহত্যা করায়, ভাই করেন প্রতিবাদ। বলছিলাম হোসেন সোহরাওয়ার্দীর ছেলে ও মেয়ের কথা। অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন হোসেন সোহরাওয়ার্দীর ছেলে মেয়ের কথা।
তার প্রথম বিয়ের পর স্ত্রী অল্প বয়সেই মারা যান। রেখে যান এক ছেলে ও মেয়ে। ছেলে তার যুব বয়সেই নিউমোনিয়ায় মারা যায়। পরবর্তীতে লম্বা সময় একা থাকেন সোহরাওয়ার্দী সাহেব। ১৯৪০ এ ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় রাশিয়ান থিয়েটার অভিনেত্রী ভেরা আলেক্সান্দ্রভনা ট্রিসেঙ্কোর সাথে ও তার সাথে বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে হয়, যার নাম রবার্ট এসবি/ রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫০ সালে ভেরার সাথে ডিভোর্স হয় সোহরাওয়ার্দী সাহেবের। ছেলেকে নিয়ে মা যুক্তরাষ্ট্র চলে যান।
৬২সালে বাবার মৃত্যু হলে একবার ঢাকায় আসেন তিনি, তবে এর মাঝে আসেননি যদিও যোগাযোগ ছিলো। মূল ভূমিকা দেখা যায় ১৯৭১ সালে। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রথম ঘরের মেয়ে বেগম আখতার সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নেন। হয়তো এটাই হওয়ার ছিলো। কারন তার বাবার বাড়ি পশ্চিম বাংলায়, মায়ের করাচিতে। বেগম আখতারের পূর্ব বাংলায় থাকার রেকর্ড নেই। বিয়ের সূত্রে তার বসবাস ৪৭ থেকে পরবর্তী সময়ে পুরোপুরি পশ্চিম পাকিস্তানেই। তার কোন সম্পৃক্ততা ছিলোনা এখানে।
বেগম আখতার বলেন তার বাবা থাকলে পাকিস্তান সমর্থন করতেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নেওয়ায় তিনি টিক্কা খানের কাজেও সমর্থন দেন।
রবার্ট এসবি বা রাশেদ সোহরাওয়ার্দী শুরুতে বেশি কিছু না বললেও গণহত্যা দেখে তিনি ব্যথিত হন। লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন তার বোন এই জঘন্য কাজে সমর্থনের জন্য তার বাবার নাম টেনে আনায় তিনি ব্যথিত। তাই তিনি পত্রিকায় বাংলাদেশের সমর্থনে বিবৃতি দেন, তাজউদ্দীন সাহেবকে চিঠিও লিখেন।
তার চিঠি ঃ
যখনই আমি পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা কমিটির ব্যাপারে জানতে পারি তখন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আমার সহমর্মিতা ও সম্পূর্ণ সমর্থন ছিলো। রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের বিবৃতির প্রয়োজন বোধ করিনি, কিন্তু যেহেতু এটি স্পষ্ট যে, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতি আমার পরিবারের একজন সদস্য তাঁর বিবৃতির মাধ্যমে অলংকৃত করতে চাইছেন, সেহেতু আমার এ ব্যাপারে মুখ খোলা কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।
আমি দৃঢ়কন্ঠে নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, আমি বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বোত্তর সফলতা কামনা করি। বিগত ২৪ বছর যাবত তারা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক অর্থনৈতিক ভাবে নিগৃহীত ও রাজনৈতিকভাবে অবদমিত হয়ে আসছে এবং এখন তারা পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যা ও অন্যান্য ঘৃণ্য অনাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে সফল হবে।
নিকট ভবিষ্যতে আমি একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে যেতে চাই, যেখানে সকল বিশ্বাস ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মানুষ সুখ-সমৃদ্ধিতে বাস করবে।
এছাড়াও আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সম্ভাষণ জানাই, যার সদস্যবৃন্দ আমার পিতার সহকর্মী এবং অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন।”
পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন দেওয়ায় তিনি তার বোনের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বেগম আখতার যেই ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন তাতে তাকে মহিলা রাজাকার বললেও কম হবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতায় আসলে অভিনন্দনও জানান। তার কন্যা পরবতীতে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের আইনমন্ত্রী হন। তবে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তার পুরো বিপরীত।
যাই হোক তিনি কিন্তু একজন থিয়েটার অভিনেতাও বটে। তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসে রাজনীতি করতে বললেও তিনি ভাষার সমস্যা ও তাঁর বাবার মতো ক্যালিবার নেই বলে এড়িয়ে যান। তিনি ৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারনায় ঢাকায় আসেন। শেখ হাসিনা লন্ডনে বেড়াতে গেলে তার সাথে প্রায়ই দেখা করতেন। লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসেও তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
রবার্ট এসবি জিন্নাহ সিনেমায় নেহেরু ভূমিকায় অভিনয় করেন, গুনী অভিনেতাও ছিলেন। গত বছর তিনি মারা যান লন্ডনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments