Friday, September 29, 2023
Homeশেরপুরভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিবে বর্ডার হাট

ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিবে বর্ডার হাট

শেরপুর সংবাদদাতা : বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারনের লক্ষে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে স্থাপিত হতে যাচ্ছে বর্ডার হাট। প্রস্তাবিত ওই বর্ডার হাট স্থাপনের জায়গাটি ইতোমধ্যে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তরা পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার কোচ উপজাতি অধ্যুষিত ওই খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাটটি বসানো হলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়সহ স্থানীয় অধিবাসীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে, বর্ডার হাটকে ঘিরে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন তারা। এ নিয়ে এলাকার সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোচ সম্প্রদায়ের ৫৫টি পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে অনাদিকাল কাল থেকে বসবাস করে আসছে। এদের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ছিল বন থেকে লাকড়ী সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢালে নিজের সামান্য জমি কিংবা অন্যের কৃষি জমিতে শ্রমিক হিসেবে কৃষি কাজ করা। কিন্তু গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন সৃজন করায় বনে আর লাকড়ী পাওয়া যায় না। ফলে কোচদের জীবন-জীবিকা হুমকীতে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বন্যহাতির তান্ডবে ফসলহানিসহ শুরু হয়েছে তাদের কষ্টের জীবন। এরই মাঝে এই গ্রামের ১১১২ (টু এস) সীমান্ত পিলার সংলগ্ন এলাকায় বর্ডার স্থাপনের বিষয়টি যেন তাদের মনে আশা জাগিয়েছে। এতে খুলতে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যের নতুন দ্বার। তারা জানান এই গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে শুধু কোচ উপজাতি নয় এলাকার সকল শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবেন। সকল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তারা ব্যবসা বাণিজ্য করে সংসার বা জীবন চালাতে পারবেন। অপরদিকে, খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামে রয়েছে অপরুপ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত গারো পাহাড়। বর্ডার হাটে বাজার সদাই কারার পাশাপাশি এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসবেন ভ্রমন পিপাসু মানুষ। এ ছাড়া যাদের পাসর্পোটের মাধ্যমে অধিক ব্যয় করে ভারত গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেন তাদের জন্য বর্ডার হাট হবে মিলনমেলা। দুই দেশের মানুষের আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করতে বর্ডার হাটে ছুটে আসবেন তারা। ফলে ক্রেতা বিক্রেতা, আত্মীয়স্বজন আর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হবে সীমান্ত এলাকা তথা বর্ডার হাট। সৃষ্টি হবে ভারত-বাংলা বাসিন্দাদের মাঝে সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। এতে সীমান্ত এলাকার বর্ডার হাট ছাড়াও অন্যান্য দোকানপাট গুলোতেও ক্রয়-বিক্রয় বাড়বে। ওই এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্র কোচ, বকুল কোচ, গৌরাঙ্গ কোচ, মায়াদেবী কোচ, বারমনি কোচ ও বিরতি কোচসহ অনেকেই জানান, এখানে বর্ডার হাট হলে বাংলাদেশীরাই সব চেয়ে বেশী লাভবান হবেন। কেননা বর্ডার হাটে বিক্রিত ও ক্রয়কৃত উভয় পণ্যেই বাঙ্গালীরা বেশি লাভ করতে পারবেন। তারা জানান, এই হাটে বাংলাদেশীদের ফলমুল, কসমেটিক্স্র, হরলিক্স, চিনি, সুপারী, আদা, মশলা, পারফিউমসহ নিত্যপণ্য কেনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর ভারতীয়দের থ্রী কোয়ার্টার সাইজ জিন্সের প্যান্ট, চ্যাপা শুটকী, পাঙ্গাস মাছ, পোল্ট্রি মুরগী, ইলিশ মাছ, কাপড় চোপর ও সবজীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্য বিনিময় ও নগদ অর্থে ক্রয় করতে শুল্কমুক্ত হওয়ায় দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন। তবে তারা বলেন, বর্ডার হাট চালু করা হলেই উভয় দেশের ক্রেতাদের পণ্যের প্রকৃত চাহিদা জানা যাবে। তারা আরো বলেন, বর্ডার হাটে চাহিত পণ্য কম খরচে পাওয়া গেলে এই এলাকায় চোরাচালান একদম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সীমান্ত এলাকার মানুষের প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সহাবস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারনে দ্রুত এই বর্ডার হাটের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সরকারের নিকট জোড় দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। এই হাট স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যেই দুই দফায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যৌথসভা ও প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেছি। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উভয় দেশের কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন ও নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments