Thursday, March 23, 2023
Homeজামালপুরভারি বর্ষণে জামালপুর শহরে জলাবদ্ধতা

ভারি বর্ষণে জামালপুর শহরে জলাবদ্ধতা

ভারি বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে না পারায় জামালপুর শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জামালপুর শহরের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শহরের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোনো বাসাবাড়ির সদস্যরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছেন।

শুক্রবার জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জামালপুরে ২২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

দেওয়ানগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাহাদুরাবাদ নৌ-থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ভোরে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের মন্ডল বাজার এলাকায় অন্তত ২০ মিটার ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জামালপুর শহরের কাচারীপাড়া, নিউ কলেজ রোড, ফকিরপাড়া, নয়াপাড়া, পাঁচরাস্তার মোড়, বোসপাড়া, সরদারপাড়া, স্টেশন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও রাস্তঘাট ডুবে গেছে।

অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে।

শহরের কাচারীপাড়ার বাসিন্দা গৃহিনী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ড্রেনগুলো ময়লা আবর্জনার স্তূপে ভরে গেছে। বছরে দুয়েকবার সংস্কারের নামে শুধু উপর থেকে কিছু পলিথিন ও ঘাস সরিয়ে নেওয়া হয়। ড্রেনের ভেতরে জমে থাকা কয়েক ফুট মাটি তুলে ফেলা হয় না। ফলে পানি সঠিকভাবে বের হতে পারে না। তা ছাড়া পানি বের হওয়ার গতিপথগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।

শহরের সড়কগুলো উন্নয়নের নামে প্রতিবার উঁচু করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০ বছর আগে যেসব বাড়ি সড়ক থেকে এক ফুট উঁচুতে ছিল এখন ওইসব বাড়ি সড়ক থেকে দুই ফুট নিচে চলে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বেশিরভাগ বসতবাড়ি ডুবে যাচ্ছে।”
রাজিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বর্ষণে তার ঘরে পানি ঢুকে দুটি ফিজ্র, পানির মোটর, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অন্যান্য আসবাবপত্র ও খাবার ভিজে গেছে। তার অন্তত দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ভারি বর্ষণে তার বাসার ভেতরে পানি ঢুকে একটি ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে।

তার অভিযোগ, শহরের স্টেশন রোড এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের নামে রাস্তার দুইপাসের ড্রেনগুলো বন্ধ করে রেখেছে। এতে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। ফলে কয়েকটি এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখতে তিনি পৌর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হবার আহবান জানান।
এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি বংশখাল সংস্কার এবং দখলমুক্ত করা, গবাখালী খাল সংস্কারের দাবিও জানান।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোনে ছানু বলেন, হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে তিনি জলাবদ্ধতার অনেকটাই নিরসন করেছেন। ড্রেন, কালভার্টসহ বেশ কিছু কাজ চলমান আছে। এসব সম্পন্ন হলে আগামীতে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না।

পৌরসভার নাগরিকদের কষ্ট নিরসনে যা প্রয়োজন তাই করা হবে বলে মেয়র জানান।

জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাঙামাটিয়া গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ৩০টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ঘর ও গাছ চাপা পড়ে ৫ জন আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

জামালপুরের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments