সীমান্ত দাস : ১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছিল সারা বিশ্ব তোলপাড় যে যার সাধ্য মত গনহত্যার প্রতিবাদ, বাঙালির স্বাধীনতা, শরনার্থীদের সাহায্য সহযোগিতা সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিল।
বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই বিশ্বের শত শত কোটি মধ্যে ছিল বেশ কিছু মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ।
যাদের প্রাণকেন্দ্র ছিল একাত্তরে বাঙালির জাতির মুক্তির জন্য তাই তো তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দুঃসাহসিক কর্মকান্ড করতে পিছপা হননি ।
তাদেরকে কেই আমরা চিনি না, জানি ও না।
এই অজানা অচেনা ভিন্ন দেশের ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বাঙালি জাতীয়তাবাদের উজ্জীবিত পরম বন্ধু ছিলেন।
এরই মধ্যে বাঙালি জাতির আরেক জন পরম বন্ধু
ছিলেন তিনি বেলজিয়ান নাগরিক ‘‘মারিও রয়ম্যান্স”।
১৯৭১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ২১ বছর বয়সী রয়ম্যান্স বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ফাইন আর্টস প্যালেস থেকে ‘লাভ লেটার’ নামের এক বিখ্যাত ছবি চুরি করেন।
সেটি তিনি করেছিলেন নিজের জন্য নয়, নিজ দেশের জন্যেও নয়।
চুরিটা তিনি করে ছিলেন বাঙালি জাতির জন্য।
এরপর তিনি ঘোষণা করলেন চিত্রকর্মটি ফিরিয়ে দেবেন, যদি তাঁর দাবি মানা হয়।
আর তাঁর দাবি ছিল ২০০ মিলিয়ন বেলজিয়ান ফ্রাঁ। বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য।
কারণ, তাঁর দাবি, বেলজিয়ান সরকার তাদের সাহায্য করছে না।
অবাক করা বিষয়, একজন চিত্রকর্ম-চোরকে যেখানে গালি দেবার কথা, সেখানে পুরো বেলজিয়াম জুড়ে তাঁর প্রতি সমর্থনের বন্যা বয়ে গেল সেই চোরের জন্য!
তাদেরও দাবি ছিল, এই টাকা পাঠাতে হবে। তবে তিনি পেইন্টিং সহ ৬ অক্টোবর ধরা পড়েন।
অবশ্য তাঁর দাবিটি মানা হয়নি, তাঁর দু’বছরের জেলও হয়।
আজকে আমাদের দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রেডিমেড পাওয়া লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশের সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা কিছু কুলাঙ্গারকে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মস্করা করতে দেখা যায়।
মারিও রয়ম্যান্স এর মত এমন অসংখ্য বীর বিদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙালি জাতি স্যালুট জানায় ।
যিনি বাঙালি জাতির জন্য দুই বছর জেল খেটে ছিলেন।
“জয় বাংলা”