আ.জা. ডেক্স:
কাশিমপুর কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। ফখরুল অভিযোগ করেন, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান মুশতাক আহমেদ। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারাগারে মৃত্যুবরণ করা লেখক মুশতাক আহমেদ সরকারের নির্মম শিকার বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। একইসঙ্গে কারাবন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মুক্তি দাবি করেছেন তিনি। ফখরুল বলেন, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সঙ্গতি, অসঙ্গতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সে জন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করছে না। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুশতাক লুটপাটকারী, কালোবাজারি, সন্ত্রাসী কিংবা ডাকাত ছিলেন না বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হলো। মুশতাকের এই নির্ভিক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণসমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন, তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন। দেশে আইনকানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারাদেশে এক পরিবেশ বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সারাজাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু-শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিলি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারূপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা। ফখরুল বলেন, নজিরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন বøগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ ও নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্তশাসিত লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। তিনি আরও বলেন, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি করছি। মুশতাক আহমেদের শোকাহত পরিবার-পরিজন ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি গতবছর মে মাসে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করে এখনও কারাবন্দি করে রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে কার্টুনস্টি আহমেদ কবির কিশোরের মুক্তি দাবি করেছেন।