আ. জা. ডেক্স:
মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা ব্যয়ে ছয়টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভার্চুয়াল এ সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড.শাহিদা আক্তার অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১২তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চারটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি এবং সেতু বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি ক্রয় প্রস্তাবে কমিটি অনুমোদন দেয়নি। এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্য একটি প্রস্তাবে পুনঃদরপত্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫৬৬ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ১৬০ টাকা। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, সেতু বিভাগের অধীন সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর ও গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়েকটস এস.এ, জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড, বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস এবং ডেভ কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। এদিকে সড়ক ও মহাসড়কের উন্নয়নে তিনটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৯ টাকা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘শরীয়তপুর (মনোহর বাজার)-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-২ এর পূর্ত কাজের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাজটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে রিলায়েবল বিল্ডার্স লিমিটেড, এমডি ময়েনউদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড এবং ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬ টাকা। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘শরীয়তপুর (মনোহর বাজার)-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০৩ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে এমডি বদরুল ইকবাল লিমিটেড, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড এবং ওয়েস্টার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার ৯১৫ টাকা। তিনি আরও বলেন,
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চারলেনে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-০৩ এর পূর্ত কাজ সম্পাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভারতের আফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের দরপত্রে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭৮৮ কোটি ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক মেসার্স পি কে এগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম পড়বে ৪১১ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০০ টাকা। বৈঠকে অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে হলো- জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক স্পট মার্কেট থেকে ১১তম এলএনজি এওটি ট্রেডিং এজি, সুইজারল্যান্ড এর কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৮ টাকা। এছাড়া, ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের ডব্লিউপি-০১ প্যাকেজের পূর্ত কাজ টিইসির সুপারিশ বাতিল করে পুনর্মূল্যায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।