মোহাম্মদ আলী: দেশমাতৃকার টানে জন্মদাতা বাবা মাকে কাঁদিয়ে, তাঁদের বারণ উপেক্ষা করে, শত বাঁধা পেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। লড়েছেন পাক হানাদারদের সাথে আসীম সাহসীকতার সাথে। কখনও মৃত্যুকে ভয় করেনি। যেকোনো মূল্যে দেশের স্বাধীনতা, দেশের মানুষের মুক্তি ছিল যাঁর লক্ষ। এই মরণপণ যোদ্ধা স্বাধীনতার মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। পাকিস্তানীদের ব্রাস ফায়ারে তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তার লাশটি পর্যন্ত ফিরে পায়নি তাঁর স্বজনরা। রণাঙ্গনের যেখানে তাঁর মৃত্যু হয় তাঁর পাশেই একটি একটি স্কুল মাঠে তাঁর দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়েছে, বলে জানিয়েছেন শহীদ ইদ্রিসের পরিবার। শহীদ ইদ্রিসের জন্ম জামালপুর জেলার পাথালিয়া গ্রামের বকুলতলায়। তার বাবার নাম মরহুম মেনা শেক। ইদ্রিস শৈশব থেকেই ছিলেন ডানপিটে ও সাহসী। পূর্ব পাকিস্তানে যখন বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে তখন তিনি টগবগে যুবক। বিয়ে শাদীর কথা চলছে । ৭ মার্চর পর পূর্ব বাঙলায় যখন টালমাটাল অবস্থা তখন তাঁরা স্বপরিবারে গ্রাম ছেড়ে চলে যান অন্যগ্রামের আত্মীয়দের বাড়ি। এমতবস্থায় এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনী প্রবেশ করে জামালপুরে। গ্রামের ছেলেরা,ছাত্র শিক্ষক, কৃষক মজুর, রাজনৈতিক নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। ইদ্রিছও যুদ্ধে যাওয়ার মনস্থির করেন। অনুমতি চান মা বাবার কাছে। তারা বারণ করেন। কিন্তু, তাঁকে দমাতে পারেনি জন্মদাতা বাবার আদেশ নিষেধ। একদিন কাউকে কিছু না বলে ঐ গ্রামের (চরযতার্থপুরের) সহযোদ্ধা আশরাফ কে সাথে নিয়ে তিনি চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। ট্রেনিং শেষে যুদ্ধে অংশ নেন শেরপুরের নকলা নারায়ণখোলা ও এর আশপাশের রনাঙ্গনে। তিনি ছিলেন দুরন্ত সাহসী। তাঁর যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা জানতেন সহযোদ্ধারা। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে নখলা নারায়ণখোলা এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে এক সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে তিনি শহীদ হন। স্বাধীনতার অনেক বছর পর পাথালিয়ায় তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।