Friday, June 9, 2023
Homeজামালপুররহস্যঘেরা জামালপুরের প্রাচীনতম ‘চন্দ্রাদিঘি’

রহস্যঘেরা জামালপুরের প্রাচীনতম ‘চন্দ্রাদিঘি’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জামালপুরের দেওরপার চন্দ্রা এলাকায় প্রাচীনতম ‘চন্দ্রাদিঘি’। এই দিঘিটির মাটির সঙ্গে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়ের লালমাটির সাদৃশ্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কবে এই দিঘি খনন করা হয়েছে, তা নিয়ে দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও দিঘির সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন লোকগাঁথা। তবে অনেকে মনে করেন, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ’র শাসনামলে এই অঞ্চলের প্রভাবশালী হরিশ্চন্দ্র দেওরপার চন্দ্রা, তীর্থ চন্দ্রা, হাট চন্দ্রার দেওয়ানি লাভ করেন; যার পরিধি ছিল জামালপুরের কালিবাড়ী থেকে কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত।

জনশ্রুতি রয়েছে, মুর্শিদকুলি খাঁ’র পুত্র রশিদকুলি খাঁ’র সঙ্গে হরিশ্চন্দ্রের কন্যা চন্দ্রাবতীর প্রণয় হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রণয়টি বিচ্ছেদে রূপ নেয়। বিরহবেদনা সইতে না পেরে চন্দ্রাবতী আত্মহত্যা করেন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে হরিশ্চন্দ্র দিঘিটি এক রাতে খনন করেন। এ ছাড়া দিঘিটিকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা।

বংশ পরম্পরায় এই এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দা বাহাউদ্দীন খান (৪৫) জানান, প্রাচীনকালে বিয়ে, বনভোজন ও মিল্লাতসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ভোজসভার আয়োজন হলে দিঘিটির পাড়ে কেউ থালা, বাসন ও পাতিল চাইলে দিঘি থেকে উঠে আসতো। তবে সেগুলো ব্যবহারের পর দিঘিতে পুনরায় ভাসিয়ে দেওয়ার নিয়ম ছিল। কোনো এক লোভী ব্যক্তি এ সব হাড়ি-পাতিল দিঘিতে না ভাসিয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখলে সেই অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এসব হাজারো গল্পগাঁথা নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে টিকে রয়েছে জামালপুরের চন্দ্রাদিঘি।

স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুরুল হক ফজলু (৭০) বলেন, আমরা এখানে ১৪ পুরুষ ধরে বসবাস করছি। বাবা-দাদাদের কাছে শুনেছি হরিশ্চন্দ্র রাজা এক রাতে দিঘিটি খনন করেছেন। কথিত আছে, এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলে তিনি দিঘিটি খনন করেন। হরিশ্চন্দ্র রাজা ঈশ্বরের কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করেন। স্বপ্নে দেখানো হয়, হরিশ্চন্দ্রের স্ত্রী কমল রানি যাতে দিঘির মাঝখানে আসে। পরে কমল রানি দিঘির মাঝখানে গেলে চারিদিক থেকে পানি উঠতে শুরু করে এবং কমল রানি দিঘি থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে তাদের সন্তান চন্দ্রাবতী তখন অনেক ছোট। শিশু চন্দ্রাবতীকে দুধ খাওয়ানোর জন্য মাঝে মাঝেই দৃশ্যমান হতো কমল রানি। হরিশ্চন্দ্র রাজা টের পেল, কমল রানি চন্দ্রাবতীকে দুধ খাওয়াতে আসে। একদিন তিনি কমল রানিকে ধরার চেষ্টা করলে, কমল রানিকে আর দেখা যায়নি।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাজ্জাত আনসরী বলেন, লোকমুখে শোনা যায় পানির জন্য প্রাচীনকালে দিঘিটি খনন করা হয়েছে। মোগল আমলে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ’র শাসনামলে হরিশ্চন্দ্রের কাছে হাট চন্দ্রা, তীর্থ চন্দ্রা, কালিবাড়ী থেকে কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত দেওয়ানি দেওয়া হয়। হরিশচদ্র এই এলাকার দেওয়ানি লাভ করে দিঘিটি খনন করেন এবং নিজের মেয়ে চন্দ্রাবতীর নামানুসারে দিঘির নামকরণ করেন চন্দ্রাদিঘি। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলে খাস হলে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা আশরাফ উদ্দিন ৯৯ বছরের লিজ নেন। তারপর তিনি এই এলাকার মালিক হন। তবে এই এলাকার প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক প্রয়াত মোখলেছুর রহমান ফকির তার একটি বইয়ে উল্লেখ করেন, মুর্শিদ কুলি খাঁ’র সন্তান রশিদ কুলি খাঁ’র সঙ্গে চন্দ্রাবতীর প্রণয় হয়। পরবর্তীতে তাদের প্রেম বিরহে পরিণত হয়। বিরহ বেদনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন চন্দ্রাবতী। কন্যা চন্দ্রাবতীর স্মৃতি রক্ষার্থে পিতা হরিশ্চন্দ্র দিঘিটি খনন করে নাম দেন ‘চন্দ্রাদিঘি’। দিঘিটি পাকিস্তান আমল থেকেই ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments