Friday, September 29, 2023
Homeঅর্থনীতিরিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ফিলিপাইন

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ফিলিপাইন

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার ও চলমান মামলার অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা বসছে বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইন। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপাইন পৌঁছেছেন। তারা ফিলিপাইনের আদালতে চলমান একটি মামলার সাক্ষ্য দেবেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আলাদতে মামলার বিষয়ও বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবেন।

এমন সময় প্রতিনিধি দল ফিলিপাইনে অবস্থান করছেন যখন রিজার্ভ চুরির মামলার বিষয়ে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) সহ অন্যদের সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্ট। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই সমঝোতা করতে বলেছেন।

সমঝোতার বিষয়ে ইতিবাচক হলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসও আজ ফিলিপাইনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। রোববার (২৯ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধার ও মামলার বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি জানতে শনিবার বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি ফিলিপাইন গেছে। প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসিসহ বিএফআইইউ ও সিআইডির দুজন করে কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া ওই দলে যোগ দেবেন ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। প্রতিনিধি দল ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে থাকবেন। এ সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াও ফিলিপাইনের মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের সম্পত্তি ক্রোকের এক মামলায় সাক্ষ্য দেবে। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনের বিষয়ে এ শুনানি হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফিলিপাইনের আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলা চলমান রয়েছে। ফিলিপাইনের সরকার ও আদালত বিভিন্ন বিষয় আমাদের সহযোগিতা করেন। সেই বিষয় ফলোআপ মিটিং করতে একটি প্রতিনিধি দল সেই দেশে গেছেন। তাদের মধ্যে বিএফআইইউ ও সিআইডির কয়েকজন গেছেন ওই দেশের আদালতে সাক্ষ্য দিতে। এছাড়া চলমান মামলার মধ্যস্থতার বিষয়ে যদি ইতিবাচক অগ্রগতি হয় তাহলে রোববার রাত্রে বিএফআইইউর প্রধানও ফিলিপাইন যাবেন।  

এর আগে গত ১৬ জানুয়া‌রি দেশের আর্থিক গেয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ জানায়, ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) সহযোগিতায় বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের রিজার্ভ চু‌রি হ‌য়ে‌ছে। তাই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত ছয়জনের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট)। ফলে রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনও বাধা রইলো না। তবে আরসিবিসিসহ অন্যান্য ১৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা রয়েছে।

বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট)  আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোগসাজশ ছিল। আদালতের রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা। শেষ পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। খোয়া যাওয়া বাকি অর্থের ফেরত প্রক্রিয়া মামলায় ঝুলে রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments