আ.জা. ডেক্স:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার খবরে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপারের হিড়িক পড়েছে। ফেরিতে পারাপার হওয়া যাত্রীদের অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক। গতকাল শনিবার সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এ নৌরুটে সচল নয়টি ফেরিতে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পারাপার হচ্ছে শতশত যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি। শুধুমাত্র জরুরি ও বিধিনিষেধের আওতামুক্ত পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে ফেরি চালু থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটিতে ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। যাত্রীর চাপে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।
এদিকে, শিমুলিয়াঘাটে পৌঁছানো ঢাকামুখী যাত্রী ও পোশাকশ্রমিকরা পরিবহন সঙ্কটে চরম বিপাকে পড়েন। সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট এড়িয়ে ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকার পথে আসেন তারা। ফলে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন জিয়াসমিন। বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফিরছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্টস খুলছে। বাধ্য হয়েই ঢাকা যেতে হচ্ছে। না গেলে তো চাকরি থাকবে না। রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। মিরপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হাবিব বলেন, গরিবরা করোনায় মরব না, গরিব মরব না খাইয়া। গাড়ি চালু না করেই গার্মেন্টস খুলে দিল। এখন আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে, ভাড়াও বেশি লাগছে। মনির শেখ নামের আরেক পোশাকশ্রমিক বলেন, সরকার এ কেমন লকডাউন দিছে, সবই তো খোলা। আবার গার্মেন্টসও খুলে দিচ্ছে। এখন তো যাইতেই হবে। অফিস থেকে বারবার কল দিচ্ছে। ২০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। ইকবাল হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, ঈদের সময় বাড়ি গিয়েছিলাম, লকডাউনে গার্মেন্টস বন্ধ তাই বাড়িতেই ছিলাম। গত শুক্রবার রাতে শুনলাম- আগামীকাল (আজ রোববার) থেকে গার্মেন্টস খোলা। হঠাৎ এভাবে গার্মেন্টস খোলা, এ কেমন সিদ্ধান্ত? সরকার শুধু মালিক-মহাজনের কথা শুনে। আমাদের কথা একটুও চিন্তা করে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবিøউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, নৌরুটে ছোট-বড় মিলিয়ে নয়টি ফেরি সচল রয়েছে। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী যাত্রীর সংখ্যা কম। ঘাটে যানবাহনের উপস্থিতিও নেই। গাড়ির চাপ না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে যেসব গাড়ি পারাপারের জন্য আসছে, তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, তবে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ খুব বেশি। বাংলাবাজার ঘাট থেকে আগত প্রতিটি ফেরিতেই চাপ রয়েছে। পোশাক কারখানা খুলছে, তাই হয়তো যাত্রীদের উপস্থিতি বেশি।
দৌলতদিয়ায় ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়: এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আজ রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ খবরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে ফেরি পারাপারের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না যাত্রীরা। এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠছেন যাত্রীরা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মাহেন্দ্রা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় করে ঘাটে আসছেন তারা। ঢাকামুখী যাত্রীরা জানিয়েছেন, রোববার থেকে তাদের কারখানা খুলছে। এজন্য ভোগান্তি সত্বেও ঢাকায় আসছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে তাদের। একইসঙ্গে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলিয়ে আটটি ফেরি চলাচল করছে। তবে ঘাটে পারের অপেক্ষায় কোনো সিরিয়াল নেই।
করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধ খাত ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিল্প-কারখানা। এরমধ্যে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। এরপরই গত শুক্রবার রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা আরোপিত বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত রাখা হলো। এদিকে, শিল্প-কারখানা খোলার অনুমতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানিয়েছে পোশাক শিল্প পরিবার তথা বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।