Friday, September 29, 2023
Homeজাতীয়শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার বিকাশে প্রাণপুরুষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২৮ মে)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার বাবার নাম তমিজউদ্দীন আহমেদ, মায়ের নাম জয়নাবুন্নেছা। বেড়ে উঠেছেন ব্রহ্মপুত্র নদের প্লাবন অববাহিকার শান্ত, সুনিবিড় ও রূপময় প্রাকৃতিক পরিবেশে। শৈশব থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। রঙ-তুলির খেলায় ফুল-ফল, বৃক্ষ, লতাপাতা, মাছ, পাখিসহ নানা বিষয়কে মেলে ধরতেন ক্যানভাসে।

ছবি আঁকার টানেই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। আশ্রয় নিয়েছিলেন কলকাতায়। সেখানে ভর্তি হন গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে।

১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এখানেই চলে শিল্পাচার্যের চারুশিক্ষার দীক্ষা। ১৯৩৮ সালে ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি। ততদিনে শিল্পী হিসেবেও শিল্পরসিকদের স্বীকৃতি অর্জন করে নিয়েছেন। স্থান করে নেন মুষ্টিমেয় আধুনিক ভারতীয় শিল্পীর তালিকায়। এরপর তিনি কলকাতা থেকে চলে আসেন ঢাকায়।

এ দেশের শিল্পের ভিত রচনায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জয়নুল আবেদিন। তার হাত ধরেই বিকশিত হয় এ দেশের চারুশিল্প মাধ্যম। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ)। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধুনিক শিল্পচর্চার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা করেন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় কংগ্রেস ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।

শিল্পীজীবনে রঙ-তুলির ছোঁয়ায় জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে এঁকেছেন দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র। ১৯৬৯ সালে তার ক্যানভাসে উঠে এসেছে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট। ১৯৭০ সালে এঁকেছেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ বিখ্যাত চিত্রকর্ম নবান্ন। একই বছরে মনপুরা নামে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের হৃদয়স্পর্শী চিত্র সৃজন করেছেন। শিল্পীর এসব কালজয়ী শিল্পকর্ম দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পেয়েছে ব্যাপক প্রশংসা ও স্বীকৃতি।

শিল্পীর আঁকা দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা ছাড়াও বিদ্রোহী, মুক্তিযোদ্ধা, গুন টানা, সাঁওতাল রমণী, সংগ্রাম, গ্রামীণ নারীর চিত্রমালা শীর্ষক ভাস্কর্য শিল্পকলায় অক্ষয় হয়ে আছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলার প্রকৃতি, জীবনাচার, প্রাচুর্য, দারিদ্র্য ও বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা তার তুলি আর ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলেছিলেন। শিল্পকলার সুবাদে বাঙালি সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বদরবারে। একই সঙ্গে আমৃত্যু সমাজ থেকে রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করে সৌন্দর্যবোধ জাগ্রত করার সাধনায় নিমজ্জিত রেখেছিলেন নিজেকে।

১৯৪৬ সালে জয়নুল আবেদিন ঢাকা নিবাসী তৈয়ব উদ্দিন আহমদের মেয়ে জাহানারা বেগমকে বিয়ে করেন। জাহানারা বেগম পরে জাহানারা আবেদিন নামে নিজেকে পরিচিত করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনের ফসল তিন ছেলে। তারা হলেন সাইফুল আবেদিন, খায়রুল আবেদিন ও মঈনুল আবেদিন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জয়নুল আবেদিন।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিল্পাচার্যের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিল্পী সংগঠন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments