রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে ৩০০ হাঁস ছেড়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। লক্ষ্য ছিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধি। সে অনুযায়ী অবমুক্তের ২২ দিনের মধ্যেই হাতিরঝিলে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে হাঁসগুলো। ইতোমধ্যে বেশ কিছু হাঁস ডিম দিতে শুরু করেছে। তবে নানান কারণে ৫/৬ টি হাঁস মারাও গেছে।
বুধবার (৮ মার্চ) হাতিরঝিল পুলিশপ্লাজা সংলগ্ন নির্ধারিত স্থানে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘর থেকে বের হয়ে হাতিরঝিলের পানিতে ভাসছে হাঁসগুলো। কিছু হাঁস পানি ছেড়ে ডাঙায় এসে ঘুরছে। রাজউকের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, পরিচর্যাকারীরা হাঁসগুলোর দেখভাল করছে। এসব হাঁসগুলোকে প্রতিদিন সকালে তাদের থাকার ঘর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, দিনের বিভিন্ন সময় খেতে দেওয়া হয়। দিনব্যাপী হাঁসগুলো হাতিরঝিলের পানিতে ঘোরাফেরা করে, ঠিক সন্ধ্যায় আবার হাঁসগুলোকে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকানো হয়।
পরীক্ষামূলকভাবে এই ৩০০ হাঁস হাতিরঝিলে ছেড়েছে রাজউক। এটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে আরও ৫ হাজার হাঁস ছাড়বে সংস্থাটি।
হাতিরঝিলে হাঁস অবমুক্ত করার উদ্দেশ্য শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, প্রাকৃতিক গুণাগুণ বৃদ্ধি করা বলে জানিয়েছেন রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা।
তিনি বলেন, হাঁস ছাড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হাতিরঝিলের সৌন্দর্যবর্ধন। যারা হাতিরঝিলে ঘুরতে আসবেন, কিংবা নৌকায় চলাচল করেন, তারা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। হাঁস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পানির দুর্গন্ধ দূরীকরণসহ হাতিরঝিলে এ ধরনের আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে হাতিরঝিলে পাঁচ হাজার হাঁস ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। এসব হাঁস দেখভালের জন্য জনবলও নিয়োগ দেওয়া হবে।

পুলিশপ্লাজা সংলগ্ন হাতিরঝিল দ্বীপ অংশে বাঁশ, টিন দিয়ে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ঝিলের পানির কাছাকাছি তৈরি করা এই ঘরেই মূলত হাঁসগুলো থাকছে।
রাজউকের নিয়োগপ্রাপ্ত হাঁস পরিচর্যাকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, হাঁসগুলোর পরিচর্যা এবং চুরি ঠেকাতে বেশ কিছুজন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে রাজউক। যারা সবাই এখানে ডিউটি করে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাঁসগুলো ছাড়ার পর থেকে তেমন কোন সমস্যা হয়নি হাঁসগুলোর। কোন হাঁস চুরিও হয়নি, তবে অসুস্থতার কারণে এ পর্যন্ত ৫/৬ টি হাঁস মারা গেছে। বাকি হাঁসগুলো হাতিরঝিলে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। বেশ কিছু হাঁস ইতোমধ্যে ডিম দিতেও শুরু করেছে। প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে হাঁসগুলো ছাড়া হয়, খেতে দেওয়া হয়। আর সন্ধ্যায় হাঁসগুলোকে ঘরে তোলা হয়।
হাতিরঝিলে স্ত্রী, শিশু সন্তানসহ ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
হাঁস নিয়ে তিনি বলেন, হাতিরঝিলে যে হাঁস ছেড়েছে এখানে খবর থেকে জেনেছি। আজ দেখলাম হাঁসগুলো হাতিরঝিলের পানিতে ঘুরছে। ঝিলের পানিতে হাঁসের এমন ঘোরাঘুরি আসলেই হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। আমার সন্তানকে খুব কাছ থেকে হাঁসগুলো দেখালাম, দেখে সে খুশি, আমরাও খুশি।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলে ছাড়া ৩০০ হাঁস নিয়ে গবেষণা করছে সংস্থাটি। রক্ষণাবেক্ষণে ভালো ফল পেলে খুব শিগগির আরও ৫ হাজার হাঁস এখানে ছাড়াতে চায় তারা। যেন হাতিরঝিলে আগত দর্শনার্থীরা প্রকৃতির সান্নিধ্য পায়। পাশাপাশি হাতিরঝিলের পানিতে অক্সিজেন সার্কুলেশন ভালো থাকবে এবং মাছগুলো খাবার পাবে। এছাড়া হাতিরঝিলে হাঁস পালনের মাধ্যমে ডিম এবং মাংসে ভূমিকা থাকবে।