গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আমঝুম ফল। দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের। আধাপাকা হলে গোলাপি-লাল এবং পরিপূর্ণ পাকলে লালচে কালো রঙ ধারণ করে। আধাপাকা এ ফল খেতে ভীষণ কষ।
আমঝুম ফল পাকলে কষাভাব অনেকটা কমে যায়। স্বাদে কষ হওয়ায় বিরল প্রজাতির এ ফলটিকে কষটি ফলও বলা হয়। জামালপুর অঞ্চলে এ ফলকে ছাগলনাদি ফলও বলা হয়।
এরই মধ্যে এ ফল জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঝোপঝাড়, বসতবাড়ি, বাগান এবং রাস্তার ধারে প্রায়ই দেখা যেত। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। গাছের আকার মধ্যাকৃতির, পাতার গড়ন আম পাতার মতো। তবে পাতা অনেক নরম। এর বৈজ্ঞানিক নাম— ‘লেপিস্যান্থেস রুবিগিনোসা শেপিনডেসি’। বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি (এপ্রিল-জুন) এ ফলের দেখা মেলে।
অঞ্চলভেদে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমঝুম ফল,- ছাগলবড়ই, ছেরাবেরা, টাটই, কাউয়াঠুটি, খেজুরজাম, ভূতিজাম ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তবে ভারতের পূর্ব-মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়ার গ্ৰামাঞ্চলে এটিকে রাখালফলও বলা হয়। ফলটি জিভ ও মুখের ঘা এবং রক্তহীণতা দূর করে। প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ এই ফলটি দেহের রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতাও বাড়ায় বলে জানা গেছে।
জামালপুরের প্রজাপতি পার্কের উদ্যোক্তা ও কাজিপুর উপজেলার আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও প্রকৃতিপ্রেমী মো. হাসমত আলী বলেন, এটি দেশের একটি অপ্রচলিত ফল। সাধারণত বনে-জঙ্গলে, গ্রামের ঝোপঝাড় এমনকি বাড়ির আশপাশেও জন্মাতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, দিন দিন বন-জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। কমে যাচ্ছে পাখির সংখ্যা। প্রাকৃতিকভাবে এ গাছ জন্মাতে পাখি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ফলটির অনেক ঔষধিগুণও রয়েছে। তাই এই ফলের গাছটি সংরক্ষণ একান্ত জরুরি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিভাস কুমার সরকার মুঠোফোনে বলেন, পূর্ব এশিয়ায় এ গাছের ব্যাপক বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশেও একসময় এই গাছটি অনেক দেখা যেত। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ গাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও বিভিন্ন অজ্ঞতার কারণে এ উদ্ভিদটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
আধুনিক টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে এটি সংরক্ষণ করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের গাছপালা আজ বিলুপ্তি হওয়ার মূল কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন।
কেননা উদ্ভিদরাজের বেঁচে থাকার জন্য যেসকল উপাদান দরকার আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সেসকল উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। গাছপালা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন নাইট্রোজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড। যা আমরা প্রতিনিয়ত ত্যাগ করি। এসকল উপাদান মিশ্রণে কিংবা দ্রবণে ঘাটতি থাকলে উদ্ভিদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় আমি জামালপুরের অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি, ভ্রমণ করার সুবাদে জেলায় দেখেছি ইউকেলিপটাস গাছ। এসকল ক্ষতিকর গাছপালার কারণেও জেলায় বিরল প্রজাতির গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।