ওষুধ শিল্প, স্বাস্থসেবা, পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষিপণ্যে অপার বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ এবং ব্রাজিল। বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে উভয় দেশ। এক্ষেত্রে এফটিএ, পিটিএ –এর মত বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি সই এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনার এবং বিটুবি ম্যাচ মেকিং অনুষ্ঠানে এসব কথা উঠে আসে।
বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, সম্ভাব্য খাত সমূহ চিহ্নিতকরণ, বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, মসৃণ বাণিজ্য লেনদেনের সহজতর উপায় অন্বেষণ, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই সেমিনার ও বিটুবি বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, “ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাধীনতার পর থেকেই। দেশটি থেকে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তুলা আমদানি হয়। এছাড়াও চিনিসহ বহু পণ্যের বাণিজ্য রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। আমি মনে করি আগামীতে বাংলাদেশে ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ব্রাজিলের ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের বাজারও ধরতে পারবে। তাই আমি ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উদার আহ্বান জানাই।”
অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেন, “বিগত দশকে বাংলাদেশে লজিস্টিকস,পরিবহন ও যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প সম্প্রসারণের সুযোগকে উন্মোচিত করেছে। ব্রাজিল ও বাংলাদেশের পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চাই।” এ সময় বাংলাদেশে মাংস,গমসহ কৃষিপণ্য রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
মাউরো ভিয়েরা আরও বলেন, “ব্রাজিল বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি করে থাকে। যেটি বাংলাদেশ এবং ব্রাজিল উভয়ের জন্যই একটি ইতিবাচক বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।”
বাংলাদেশ ও ব্রাজিলে মধ্যে বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হলো তৈরি পোশাক। বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সংগ্রহ করে থাকে। অন্যদিকে, গুণগত মানের তুলা উৎপাদনের জন্য ব্রাজিল বিশ্বনন্দিত। সুতরাং বস্ত্রখাতে উভয় দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বিপুল। একই ভাবে, ব্রাজিলের বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং বাংলাদেশের শক্তিশালী ঔষধ শিল্পের সমন্বয়ে দেশ দু’টি সাশ্রয়ী ও গুণগত স্বাস্থসেবা এবং ঔষধ পেতে পারে।” এছাড়া কৃষিতে ব্রাজিলে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেন মন্ত্রব্য করেন তিনি।
ব্রাজিল থেকে প্রাণিজ আমিষ, ইথানল, অপরিশোধিত চিনি, গো-মাংস, তুলা, ভেজিটেবল ওয়েলসহ নিত্যপণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে বলেন জনান মাহবুবুল আলম। এজন্য দু’দেশের মধ্যে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, লজিস্টিকস সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরাসরি নৌ-পথ রুট চালুর মাধ্যমে দ্বিপাক্ষীক বাণিজ্যের খরচ ও সময় কমিয়ে আনা সুযোগ রয়েছে বলেন মনে করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্রাজিল থেকে প্রায় ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর প্রেক্ষিতে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ০.১৭ বিলিয়ন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে দু’দেশের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
পাশাপাশি বিশ্বের বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ব্রাজিলের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিবিসিসিআই সভাপতি শাহরিয়ার আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, বিবিসিসিআই সহ-সভাপতি সাইফুল আলম, ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, বিবিসিসিআই পরিচালক, ব্যবসায়ী নেতা, সরকারি কর্মকর্তা প্রমুখ।