শেরপুর সংবাদদাতা : কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শেরপুরেও রয়েছে কৃষি পর্যটনের অপার সম্ভবনা। আপনার সেই উৎসব-উদযাপনে ভিন্নতার ছোঁয়া এনে দিতে পারে কৃষি পর্যটন। শহরের পরিবেশে বেড়ে ওঠা স্কুলের ছেলে-মেয়েরা ভাত খায় ঠিকই কিন্তু কীভাবে ধান হয় তা হয়তো তারা কখনো দেখেনি। কীভাবে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ঝড়-বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে ফসল ফলাচ্ছেন তা শুধু টিভিতে দেখলেও বাস্তবে উপলব্ধি করেনি কখনো। তাই ঈদের ছুটি বা অন্য কোন ছুটি হতে পারে তাদের দেশের বৈচিত্রময় কৃষি ও কৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। শীত মওসুমে কার না মন কাড়ে গ্রামীণ জনপথের পাশে হলদে সরিষা ক্ষেত। দিনাজপুরের লিচু ভালো, রাজশাহীর আম, সিলেটের চা ভালো, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাম। নরসিংদীর কলা ভালো, বগুড়ার দই। আর শেরপুরের ব্র্যান্ডিং হয়েছে তুলশীমালার সুগন্ধে, পর্যটনের আনন্দে। একেক অঞ্চল একেকটি ঐতিহ্যবাহী ফসল নিয়ে কৃষি পর্যটন হতে পারে। শহরের তরুণরাও এসব স্পটে দল বেঁধে ভ্রমণ করতে পারে। এতে তারা কৃষির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে পাশাপাশি, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে নির্মল আনন্দ পাবে। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর মনকাড়া চিত্র-বৈচিত্রে ভরা। যে মৌসুমই আসুক না কেন সবুজ আর সজীবতার যেন শেষ নেই। আর এর মধ্যেও আছে নানা বৈচিত্রের সমাহার। কেউ কি আমরা খুঁজে দেখেছি সেসব বৈচিত্রময় বিচিত্রতাকে। কতজন কবি’র ভাষায় চোখ মেলে দেখেছি ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে, কোথায় এমন হরিৎ ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে। কিংবা শীতকালীন সবজি ক্ষেতে সকালের শিশির বিন্দু। হয়তো দেখেছি আসা-যাওয়ার পথে। কিন্তু দেখিনি দেখার মতো করে। মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনা করিনি কোনো কিছুর সঙ্গে। যদি বলি, শেষ কবে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হেঁটেছেন? মনে আছে কি কারো? আপনার নাগরিক জীবনে সেই সুযোগই বা কই? বছরে দুইটি ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে মানুষ। ঈদ ছাড়াও বছরের বিভিন্ন মওসুমে রয়েছে নানা ছুটি এবং উৎসব। শেরপুর জেলায় এক সময় প্রায় ২০ টি খাল, অর্ধশত বিল ও ৭ টি নদী ছিল। এসব জলাশয়ে নৌকা করে ঘুরে বেড়ানো, পাখি দেখা, মাছ ধরার, জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরার সুযোগ, নৌকা বাইচ দেখা এবং নৌকা চালানো বেশ আকর্ষনীয়। ধানের জেলা হিসেবে ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম জেলা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে শেরপুর জেলা। বছরে তিনটি ধানের আবাদের মওসুমে দুগন্ত জুড়ে সোনালী ফসলের সমারোহে যে কোন মানুষের মনে দোলা দিয়ে যায়। শীত মওসুমে জেলার সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কিছু এলাকা এবং নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা এবং উরফা ইউনিয়নে সরিষার ব্যপক ফলন হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সরিষার ফুল এলে দিগন্ত জুড়ে মম গন্ধ ছড়িয়ে যায়। এসময় দু’চোখ যে দিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদের সমারোহ। এ যেনো হলুদ গালিচায় প্রকৃতি সাঁজে নতুন সাঁজে। সরিষা মওসুমে সরিষা ক্ষেতের পাশেই মৌমাছি পালনকারীদের মধু সংগ্রহ করে এবং মধু খাওয়া, পর্যটকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা রাখা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে রয়েছে আম, জাম, লিচু, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন মিশ্র ফল বাগান, ফলজ, ওষুধি, বনজ গাছের মনোরম নার্সারি, বিভিন্ন গাছ-গাছালির অর্কিড বাগান উল্লেখযোগ্য। শহরের প্রাণ কেন্দ্রের নয়আনী বাজার ডিসি অফিসের চারপাশে লেক বিষ্টিত ছায়াসুনিবির পরিবেশে ডিসি চত্বর। কৃষি পর্যটন এলাকায় রকমারি ফুল ফোটা সবজি ক্ষেত পরিদর্শন, টাটকা সবজি সংগ্রহ ও চাষ কৌশল দেখা, সুন্দর সুন্দর ফুল, ফল ঝুলে থাকার অন্যরকম দৃশ্য সকলের মন জুড়ায়। জেলায় রয়েছে কৃষি নির্ভর ও কৃষি ভিত্তিক অটোমেটিক রাইস মিল, হিমাগার, মুড়ি ও চিড়া তৈরী কারখানাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরী ফ্যাক্টরি ও ইন্ডাস্ট্রি। এসব ফ্যাক্টরিতে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করা, চরাঞ্চলের কৃষি ও চরের সংগ্রামী মানুষের কৃষি কর্মকান্ড পরিদর্শন করা এবং তাদের সঙ্গে কাজে অংশগ্রহণ করা আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ করবে। এগ্রো ফিসারিজে কৃষি খামার পরিদর্শন, পাহাড়ি ও অধিবাসীদের সাথে পরিচিত হওয়া, কৃষকের কর্মকান্ড পরিদর্শন, কৃষকের মুখ থেকে শোনা ফসল উৎপাদ ও জীবীকা নির্বাহের বর্ণনা ইত্যাদি কৃষি পর্যটনের আকর্ষণ করতে পারে।
Related Posts
শেরপুরে ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- AJ Desk
- January 30, 2024
শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুরে জেলা পর্যায়ে ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা […]
শেরপুরে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্স
- AJ Desk
- October 21, 2024
শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুরে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৪ উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার […]
ঝিনাইগাতীতে উপজেলা শুমারি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
- AJ Desk
- November 21, 2024
ঝিনাইগাতী সংবাদদাতা : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার হল রুমে গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা অর্থনৈতিক শুমারি […]