অর্থাভাবে নীড়ের বিশ্ব দাবার টুর্নামেন্টে খেলা অনিশ্চিত

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মন্টেনিগ্রোতে শুরু হচ্ছে বিশ্ব জুনিয়র দাবা টুর্নামেন্ট। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার ধাপে ধাপে বিড়ম্বনার শিকার বাংলাদেশের দাবাড়ুরা। জুনিয়র বালক-বালিকা বিভাগের চ্যাম্পিয়ন সাকলাইন এবং ওয়াদিফা এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারছেন না ভিসা জটিলতার জন্য। তাদের পরিবর্তে খেলার চেষ্টা করছিলেন জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়। তার অংশগ্রহণও এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে টাকার অভাবে বিমান টিকিট নিশ্চিত করতে না পেরে। 

বাংলাদেশে মন্টেনিগ্রোর দূতাবাস নেই। দাবা ফেডারেশন অন অ্যারাইভাল ভিসার চেষ্টা করলেও মন্টেনিগ্রো অপরাগতা প্রকাশ করে তুরস্ক থেকে ভিসা নেওয়ার সুপারিশ করে। শুধু থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে বিশ্ব দাবা সংস্থা। যাওয়া-আসা ও ভিসা স্ব স্ব খেলোয়াড়ের। ভিসা প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় দুই জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন এই টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ান। 

জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন মনন রেজা নীড়ের আমেরিকার ভিসা রয়েছে। আমেরিকান ভিসা থাকলে মন্টেনিগ্রোর জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন নেই। তাই মনন রেজা নীড় বিশ্ব জুনিয়র দাবায় খেলার জন্য চেষ্টা করেন। তাতে বাধ সাধে বিমানের টিকিট। মন্টেনিগ্রোর বিমান ভাড়া ঢাকা থেকে প্রায় দুই লাখ। সেই টাকা ফেডারেশন ও তার পরিবার জোগাড় করতে পারেনি এখনও, এজন্য নীড়ের খেলাটা অনেকটাই অনিশ্চিত। 

নীড়ের মা মুনমুন রেজা বলেন, ‘নীড় অত্যন্ত মানসিক চাপে রয়েছে। এক সপ্তাহ পরেই খেলা। টিকিটের দাম বাড়ছে। আবার টিকিটও দু’টির বেশি নেই। আমরা বুকিং দিয়ে রেখেছি। যা আগামীকাল পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে টাকার সংস্থান হলে টিকিট কাটতে পারব। না হলে নীড়ের বিশ্ব জুনিয়র টুর্নামেন্ট খেলার সম্ভাবনা আর থাকবে না।’

দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান সুমন বলেন, ‘ফিদের টুর্নামেন্টগুলোতে ফেডারেশন থেকে সাহায্য করা উচিৎ, কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে অর্থ চাওয়া হলেও এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। এই টুর্নামেন্টের সময় খুব কম এবং ব্যয় বাড়ছে। নীড় দ্রুত জিএম হওয়ার মতো দাবাড়ু। সামনে আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তাকে টুর্নামেন্ট খেলানোর ব্যবস্থা করব।’

ফুটবল-ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলায় অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের তুলে ধরতে পারেন না নানা সংকটে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মনন রেজা নীড়। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের বাংলাদেশে সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার রেকর্ডও ভেঙেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যত বেশি খেলবেন তত বেশি রেটিং বৃদ্ধি ও নর্ম পেয়ে জিএম হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু অর্থাভাবে নীড় খেলার সুযোগই পান না।

জাতীয় দাবার চ্যাম্পিয়ন মনন রেজা নীড় খুব কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘আর্থিক নিশ্চয়তা পেলে আমি অনেক টুর্নামেন্টে খেলতে পারতাম। এতে জিএম হওয়া অনেক সহজ হতো। অনেক সময় এমনও হয় দুই দিন পর খেলা, আমি জানি না খেলতে পারব কি না। এ রকম চাপ নিয়েই খেলে যাচ্ছি।’

বিশ্ব জুনিয়র দাবায় অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশের আরেক দাবাড়ু প্রয়াত গ্রান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের পুত্র ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টারের ছেলেকে চলতি বছর কয়েকটি টুর্নামেন্টের জন্য ১৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করেছে। ফলে তার মন্টেনিগ্রো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে সমস্যা নেই। মন্টেনিগ্রোর পাশাপাশি হাঙ্গেরিতেও একটি টুর্নামেন্ট খেলবেন তাহসিন। তিনি ইতোমধ্যে হাঙ্গেরির দূতাবাসের মাধ্যমে সেনজেন ভিসা পেয়েছেন।