ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে কাংখিত মানে উন্নয়নের জন্য ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৩১ দফা দাবি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর প্রস্তাবনা পেশ করেন ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ সভাপতি, ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ মো: আবদুর রহমান প্রমুখ।
১। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত দলীয় দৃষ্টিকোনে সেন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন করা হয়ে আসছে এমন লোকও সেন্ডিকেট সদস্য হয়েছেন, যারা দায়িত্ব ও কর্তব্য কি তা বাস্তবতার আলোকে অনুধাবন করতে না পারায় সঠিক সময়ে সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি।
# সমাধান: নতুন আঙ্গিকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমগণকে সেন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা। যারা এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সাথে সাথে আলেম হিসেবে খ্যাতিমান।
২। একাডেমিক কাউন্সিল
একাডেমিক কাউন্সিলে প্রতিটি বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন লোকদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা।
#এ ক্ষেত্রে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লোক বাছাই করার বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা। দলীয় বা কোন সুপারিশের দিকে নজর না দেয়া।
৩। গবেষণা:
দীর্ঘ এক যুগেও গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়নি। যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দু:খ জনক। অতিদ্রুত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা।
# পরীক্ষার ক্ষেত্রে ফাযিল চতুর্থ বর্ষে ৫০ নম্বর থিসিস পেপার জমা দেয়ার বিধান দিয়ে গত ২ সেশন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। অনার্স মাদরাসা সমূহের বেশির ভাগ মাদরাসায় এমফিল বা পি.এইচ.ডি শিক্ষক নেই। অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ বা বিভাগীয় প্রধান গণ বেশির ভাগ গবেষণার পদ্ধতি জানেন না। বর্তমানে রচনা প্রতিযোগিতার নিবন্ধের মত নিজেদের মনমত ৫০ নম্বরে ৪৫ এর অধিক নম্বর দিয়ে ফলাফল দেয়া হচ্ছে । উক্ত শ্রেণি ও কামিল মাস্টার্স এক বছর মেয়াদী কোর্সে বেশির ভাগ মাদরাসায় গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ের কোর্স শিক্ষক নেই। যার ফলে ছাত্রদের মধ্যে গবেষক তৈরীর লক্ষ্য ব্যর্থ হচ্ছে।
সমাধান: ফাযিল অনার্স মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পি.এইচ.ডি ও এমফিল ডিগ্রীধারীদের দায়িত্ব দিয়ে থিসিস পেপারের নম্বর বহিরাগত বিশেষজ্ঞ দ্বারা যাচাই করে নম্বর দেয়ার ব্যবস্থা হলে মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন একধাপ এগিয়ে যাবে।
প্রতিটি অনার্স মাদরাসার ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যে মাদরাসার উদ্যোগে দিন ব্যাপী কর্মশালা করে গবেষণা পদ্ধতি ও কিভাবে লিখতে হয়, তার বাস্তব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারীগণের সহযোগীতা নেয়া যেতে পারে।
৩। গবেষণা জার্ণালঃ
বহুবার বৈঠক করার পরেও গবেষণা জার্নাল বের করা সম্ভব হয় নি। এ বিষয়টি মাদরাসার অভিজ্ঞ গবেষকদের দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে জার্নাল বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪। ফাযিল অনার্স ও কামিল শ্রেনির পাঠ দানের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোর্স আউটলাইন তৈরি করে মাদরাসাসমূহে সরবরাহ করা। অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানগনের বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে অনার্স পরিচালনায় অভিজ্ঞ করে তোলা।
৫। অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের জন্য শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল গঠন করে তদারকির ব্যবস্থা করা।
৬। ফাযিল ও কামিল শ্রেনির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এমন মাদরাসাও রয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ কোর্সে ১দিনও ক্লাসে উপস্থিত হয় নি। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। যে সকল মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭। কামিল শ্রেনির মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ মাদরাসা ১দিনে শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা গ্রহনের ফলে নাম/শ্রেনি জিজ্ঞেস করে দ্রুত শেষ করে বিশেষজ্ঞগণ হাদিয়া গ্রহণ করে ফেরার চেষ্টা করেন। যা সত্যিই দু:খ জনক। বর্তমানে মৌখিক পরীক্ষার কোন গুরুত্বই শিক্ষার্থীদের কাছে নেই।
৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ফাযিল ও কামিল শ্রেনির শিক্ষকগণের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
৯। ফাযিল অনার্স ও কামিল পরীক্ষা কাংক্ষিত মানে হচ্ছে না। তাই পরীক্ষাসমূহ বিশেষ টিম গঠন করে নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করা।
১০। পরীক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষক প্যানেল তৈরি করে যাচাই বাচাই করে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা। কোন রূপ অনিয়ম প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১১। রেজিষ্ট্রেশন, পরীক্ষার ফর্ম পূরণের ফি যতটুকু কমানো যায়, তার ব্যবস্থা নেয়া।
১২। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি প্যানেল তৈরি করে তাদের নৈতিক উন্নয়নের জন্যে বিশেষ কর্মশালার ব্যবস্থা করা।
এ ক্ষেত্রে সকল র্দূণীতি ও স্বজনপ্রীতি বা গভার্নিং বডির পক্ষ পাতিত্বের সকল পথ বন্ধ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং মাদরাসাসমূহের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অতিতে নিয়োগ বানিজ্যের গুঞ্জরণ রয়েছে,যা এই পবিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দু:খ জনক। মাদরাসার অধিভূক্তি ও স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক দূর্নীতির কথা ছিল সকলের মুখে মুখে। তাই এ সকল ক্ষেত্রে দূর্নীতি বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৩। মাদরাসার অধিভূক্তি ও একাডেমিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা। বিধিতে জটিলতা থাকলে সহজ করার চেষ্টা করা।
১৪। অবসর প্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষকগণকে বিভিন্ন পদে ও কাজে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা।
১৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
বিশেষ করে “পি.এইচডি” ধারীগণের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।
১৬। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু মাদরাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে মাদরাসার উপযোগী লেবাস-পোষাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা। অফিস চলাকালীন সকলকে জামাতে নামাজ আদায় করার জন্যে উৎসাহিত করা এবং নামাজের পর সংক্ষিপ্ত বিষয় ভিত্তক দরস/ আলোচনার ব্যবস্থা করা।
১৭। মাদরাসা পরিদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাগণের সাথে মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ সিনিয়র শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা।
১৮। শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটানোর জন্যে পরিকল্পনাভিত্তিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অরগানোগ্রাম নতুন করে সাজিয়ে শূণ্যপদ সমূহের দ্রুত পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ সর্বাত্বক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
১৯। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল ও পি.এইচডি ডিগ্রি প্রদানের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদরাসা অঙ্গনে অবসর ও কর্মরত পি.এইচডি ডিগ্রিধারীদের তত্বাবধায়ক হওয়ার সুয়োগ করে দেয়া। সে ক্ষেত্রে যাচাই বাচাই করে ১টি প্যাণেল তৈরি করা। এম.পিল ও পিএইচডি ডিগ্রী প্রার্থীদের সকল ধরণের ফি যত কম নেয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
২০। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নৈতিক উন্নতির জন্যে মাসিক মানোন্নয়নের সভার ব্যবস্থা করা।
২১। পরীক্ষক, প্রশ্ন প্রনয়ন ও নিরীক্ষকসহ জরুরী সেবার ফি বৃদ্ধি ও অতি অল্প সময়ে সম্মানি পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
২২। সেশন জটমূক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে ৫শালা একাডেমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয়া।
২৩। মাদরাসাসমূহের সাথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা।
২৪। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। যাতে আরবি, ফার্সি, উর্দূ ও ইংরেজীসহ বিশ্বের প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে।
২৫। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২৬। আল-আজহার, মদীনা, বাগদাদ, হায়দারাবাদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করা।
২৭। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যায় থেকে সনদ প্রাপ্তগণ দেশ ও বিদেশের সকল চাকরির ক্ষেত্রে বিনা বাধায় প্রবেশ করার ব্যবস্থা করা। যাতে মাদরাসায় পড়ার পর কলেজে যেতে না হয়।
২৮। ভালো ফলাফলের জন্যে শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
২৯। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা। যাতে দেশের কোথাও গ্রন্থটি পাওয়া না গেলে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়।
৩০। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ ও মাদসার পি.এইচ ডিগ্রীধারীগণকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়নের ব্যবস্থা করা। যা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে চলমান রয়েছে।
৩১। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। যাতে আর্থিক সংকটের কারণে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করতে না হয়।