ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভোট প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ভোট।
ভোট দেওয়ার পর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক বক্তব্যে খামেনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ হচ্ছে। ভোট শেষ হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আশা করছি, নির্বাচনের ফলাফল ইরানের মিত্রদের খুশি করবে, আর শত্রুদের হতাশায় ডুবিয়ে দেবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী দেশ ইরানের আয়তন ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ কিলোমিটার, প্রদেশের সংখ্যা ৩০টি। পার্লামেন্টের নাম মজলিশ-ই সুরা-ই ইসলাম বা সংক্ষেপে মজলিশ। মজলিশের মোট আসনসংখ্যা ২৯০টি। প্রতি চার বছর পর পর পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় ইরানে। এবারের ভোটে মজলিশের সব আসনের বিপরীতে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি।
ইরানে একসময় রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে সেখানে ক্ষমতাসীন হয় কট্টরপন্থী ইসলামী সরকার। যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশই কোনো না কোনো ভাবে সরকার সমর্থক।
হিজাব সঠিকভাবে না পরার অভিযোগে ২০২২ সালের মার্চে রাজধানী তেহরানে মাশা আমিনি নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ। পরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু হয় তার।
মাশা আমিনির মৃত্যুর জেরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইরান। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি, অর্থাৎ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে এই বিক্ষোভ এবং ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা দখলের পর এই গণ আন্দোলনের জেরে প্রথমবারের মতো ভিত কেঁপে উঠেছিল ইসলামপন্থী সরকারের। ব্যাপক দমন-পীড়ণের মাধ্যমে সেই জনবিক্ষোভ দমন করেছে সরকার। সেই জনবিক্ষোভের পর প্রথম ভোট শুরু হয়েছে ইরানে।
তবে বিক্ষোভ দমনে সফল হলেও সরকারের প্রতি জনগণের একটি বড় অংশের ক্ষোভ এখনও বেশ ভালোভাবেই রয়ে গেছে। অন্তত দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা এমনই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রাজনীতি বিশ্লেষক রয়টার্সকে বলেন, ‘জনগণের কাছে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য (এবারের ভোটে) উচ্চমাত্রার টার্নআউট দরকার, কিন্তু সম্ভবত তার বিপরীত ঘটতে যাচ্ছে। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, এবার মোট ভোটারের মাত্র ৪১ শতাংশ ভোট দেবেন।’
যদি সত্যিই এমন ঘটে, তাহলে এই নির্বাচনে ইতিহাসে সর্বনিম্ন টার্নআউটের রেকর্ড করবে ইরান। এর আগে ২০২০ সালের পার্লামেন্ট ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। এতদিন পর্যন্ত এটি ছিল সর্বনিম্ন টার্নআউটের রেকর্ড। তার আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে টার্নআউট ছিল ৬২ শতাংশ।
অবশ্য সম্ভাব্য এই রেকর্ড নিম্ন টার্নআউটের কারণ শুধুমাত্র মাশা আমিনির মৃত্যু ও তার ফলে সৃষ্ট ক্ষোভ নয়। দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিও একটি বড় কারণ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির জনগণের উল্লেকযোগ্য অংশ ব্যাপক ভোগান্তিতে রয়েছেন।
‘জনগণের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা মনে করেন—ইরানকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করার ক্ষমতা ইসলামপন্থি শাসকগোষ্ঠীর নেই। এটি নিম্ন টার্নআউটের একটি বড় কারণ,; রয়টার্সকে বলেছেন এক রাজনীতি বিশ্লেষক।
সূত্র : রয়টার্স