ইসরাইলের বিষয়ে নীরব সেলিব্রেটিদের বয়কট আন্দোলন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে

গাজা উপত্যকার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপরাধযজ্ঞের ফলে বিশ্ব অঙ্গনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিভিন্ন ফ্রন্ট সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশ্বের পশ্চিম ও পূর্বের দেশগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসরাইলি পণ্য এবং ইসরাইলের সঙ্গে ব্যাপক আকারে সম্পর্ক রয়েছে- এমন কোম্পানির পণ্য বর্জন করে ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর অর্থনীতিকে ক্ষতি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

প্রায় ২০ বছর ধরে অপতৎপরতা চালানোর কারণে ‘বয়কট, বিনিয়োগ বন্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা’ প্রচারাভিযান আবারও বিশ্বের সমস্ত অংশে মানুষের মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ইসরাইল বিরোধী আন্দোলনের প্রচারভিযান ‘বয়কট, বিনিয়োগ বন্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা’ পেজটি তার অনুসারীদের ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকতে বলেছে। 

ক্যাম্পেইনটি ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছে, যেগুলো ফিলিস্তিনি এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলো সম্পর্কে অমানবিক বর্ণনাকে সমর্থন করে বলে সন্দেহ করা হয়।

শিশু হত্যাকারী ইসরাইলকে বয়কট করার লক্ষ্যে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে তেলআবিবের শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে যেসব সেলিব্রিটি এবং প্রভাবশালী নীরব ভূমিকা পালন করেছে, তাদের মোকাবিলা করার জন্য আরেকটি প্রচার অভিযান শুরু করা হয়েছে।

ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন ‘বয়কট, বিনিয়োগ বন্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা’র কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম এই প্রচার অভিযান হলো- সঙ্গীতশিল্পী, অভিনয় শিল্পী এবং বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের বয়কট করা।

গত নভেম্বরের শুরুতে আমস্টারডামে একটি মর্যাদাপূর্ণ ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন ফিলিস্তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন। তারা একটি প্ল্যাকার্ড ধরেছিলেন- যাতে লেখা ছিল ‘সমুদ্র থেকে নদী পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’,  এরপর সেখানে করতালির ঢেউ ওঠে এবং সবার মন জয় করে। এ নিয়ে ‘হারেৎজ’ পত্রিকা এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বিশ্বে ইসরাইলের সাংস্কৃতিক বয়কট বাড়ছে।

ইসরাইলকে বয়কট করার প্রচারণার সক্রিয়তার সমান্তরালে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধ সম্পর্কে নীরব সেলিব্রিটি এবং প্রভাবশালীদের মোকাবিলা করার জন্য আরেকটি প্রচার শুরু করা হয়েছে। গাজা ইস্যুতে নীরব থাকা সেলিব্রিটিদের বিরুদ্ধে এই মিডিয়া প্রচারণার শুরুটা ‘মেটগালা’ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মেটগালা হলো- ফ্যাশন জগতের শিল্পী এবং ডিজাইনারদের জন্য একটি বার্ষিক উৎসব, যেটি নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট-এ কস্টিউম ইনস্টিটিউটের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছরের ‘মেটগালা’র রেড কার্পেটে বিলাসবহুল পোশাকে হলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের ছবি প্রকাশের সময় এই প্রচার অভিযানটি শুরু হয় এবং সাইবার স্পেস ব্যবহারকারীদের ক্ষোভের জন্ম দেয়। কারণ এই ব্যয়বহুল অনুষ্ঠানটি চলাকালেই রাফাহ নগরীতে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বর্বরোচিত হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের ছবি সবার হাতে হাতে চলে আসে। অনেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজনকে গাজায় সংঘটিত অপরাধগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার এবং কোণঠাসা করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন।

সাবেক মার্কিন মডেল হ্যালি কালিল গাজার শিশুদের ক্ষুধার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘তাদের কেক খেতে দাও’। তার বক্তব্য অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষোভের কারণ হয়েছিল এবং হ্যালি কালিলকে ডিজিটাল বিচারে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

হ্যালি কালিল হলেন একজন প্রভাবশালী মডেল, যিনি মেটগালার আগে ১৮ শতকের মেরি আন্তোইনেট-স্টাইলের পোশাক পরা একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবীরা ফ্রান্সের শেষ রানি মারি আন্তোইনেটকে গিলোটিন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের যেটা ক্ষুব্ধ করেছিল, তা হলো- মেরি আন্তোইনেটকে দায়ী করা শব্দগুলোই হ্যালির মাধ্যমে পুনরাবৃত্তি হয়। ইতিহাসের বইয়ে লেখা আছে যে, যখন ক্ষুধার্ত ফরাসিরা বিদ্রোহ করেছিল, তখন ভার্সাই প্রাসাদের সমৃদ্ধি ও আরাম আয়েশে মগ্ন মেরি আন্তোইনেট জনগণের অসন্তোষের কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। যখন তাকে বলা হয়েছিল যে, লোকেরা প্রতিবাদ করেছিল কারণ তাদের কাছে রুটি নেই। তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আচ্ছা! তাদের বিস্কুট খেতে দাও! সূত্র: স্কাই নিউজ।