মোহাম্মদ আলী : দুর্নীতি, অনিয়ম, উশৃঙ্খল ও স্বহিংস আচরণের প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও ভাঙ্গচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। শুধু তা-ই নয়, ওই শিক্ষককে অসৎ ও আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা!
রোববার, জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন বেনুয়ার চর এমএইচ ( মোশাররফ হোসেন ) উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবার বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীন ও বিএসসি শিক্ষক হযরত আলীর সাথে স্কুলে হাতাহাতি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজের গায়ে হাত তোলার অপরাধে সহকারী শিক্ষক হযরত আলীকে শোকজ করেন প্রধান শিক্ষক। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
ঘটনার দিন সকালে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এদিন স্কুল চলাকালে সহকারী শিক্ষক হযরত আলী সমর্থীত একদল শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে স্কুল চত্বরের ভিতর বাহিরে বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের মিছিলের সাথে যুক্ত অভিভাবকরা। তারা মিছিল নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এমতাবস্থায়, আন্দোলকারীদের একটি অংশ প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাকে কিল ঘুষি, চড়থাপ্পড় ও জুতা পেটা করে এবং ভাঙ্গচুর চালায়।
এমন খবর পেয়ে ইসলামপুরের দায়িত্ব থাকা সার্কেল এসপি, ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল স্কুলে পৌঁছান। তারা আন্দোলনকারীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাতেও আন্দোলনকারীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে অনর থেকে মুহূর্মুহূ শ্লোগান দিতে থাকে। এরপর স্থানীয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথার্থ আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। অবশেষে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে দীর্ঘ সাড়ে ৫ ঘন্টার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীনকে বের করে নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, হযরত আলী বলেন, আমি আমার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মানের উন্নতির লক্ষে সন্ধ্যার পর একটি কক্ষে কোচিং করাতাম। কিন্তু, প্রধান শিক্ষক তা সহ্য করতে পারতেন না। একারণে ঘটনার বুধবার তিনি আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে আমাকে বলেন যে,” তুই আর প্রাইভেট পড়াতে পারবি না”। আমি তার এ অন্যায় আচরণ ও আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি আমার উপর চড়াও হন এবং আমাকে মারধর করেন।
অপরদিকে বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীন বলেন, আমার সহকারী শিক্ষক হযরত আলী সন্ধ্যার পর থেকে রাত অবধি একটি বাজারের নির্জন কক্ষে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ায়। এব্যাপারে অনেক অভিভাবক এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আমাকে অভিযোগ করেছেন। যেকোনো সময় একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তাকে ওইসময়ে প্রাইভেট পড়াতে বারণ করি। কিন্তু, সে আমার আদেশ অগ্রাহ্য করে কাঠের চেয়ারের হাতল ভেঙ্গে আমাকে মারতে এসেছিল। পরবর্তী আমি তার এ অন্যায় ও উশৃঙ্খল আচরণের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করলে, সে তার ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের উষ্কে দিয়ে আমাকে পিছিয়েছে এবং আজকের অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।