মোহাম্মদ আলী : পাক বাহিনীর গোলাবারুদ বোঝাই জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজে থাকা গোলাবারুদগুলো ফুটে দিগবিদিক ছুটছিল। তার কোনোটা আমাদের মাথার উপর দিয়ে কোনোটা ডানে বায়ে দিয়ে ছুয়ে যাচ্ছিল। ভয়ে আমরা আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। এমন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে দ্রুত গতীতে বিপদসীমা পার হচ্ছিলাম আমরা মুক্তিযোদ্ধারা। সেটি ছিল আমার পুরো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি ঘটনা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর উপর পাক হানাদার বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন, জামালপুর জেলার কম্পপুর গ্রামের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত, আব্দুর রহিম (৮৪)।
মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি সনদ ও কিছু ভাতা পাওয়ার আশায় আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছি দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি ও ইজ্জত রক্ষায়। যুদ্ধ করে জীবিত ফিরলেও আমাদের মেরে ফেলা হবে এমন শঙ্কা নিয়েও আমরা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছি। রণাঙ্গন ছেড়ে আসেনি। আমরা মরে যাই তাতে দুঃখ নেই। দেশ ও দেশের মানুষ তো বাঁচবে! এই বিশ্বাস নিয়েই শত্রুর সাথে মরণপণ সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু, বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি? মাস গেলে কিছু টাকা আর একটি সনদ? তাতেই আমাদের প্রতি দেশের মানুষের কত সমালোচনা কত হিংসা। জীবন সায়াহ্নে এসে জাতি আমাদের যে প্রতিদান দিল তা আমরা কোনোদিন আশা করিনি! উল্লেখ যে, পাকিস্তানি আনসার বাহিনীর চাকুরী ছেড়ে স্ত্রী সন্তানদের মায়া ত্যাগ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।