আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে পদত্যাগ করে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা, আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। সহযোগী সদস্য পদে ফর্ম পূরণ করে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জামায়াতে ইসলামীতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।
এবি পার্টির সব ধরণের পদ ও কার্যক্রম থেকে সরে আসার বিষয়টি তিনি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবি পার্টি থেকে পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সর্বশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।
সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দেশব্যাপী সংগঠনকে বিস্তার করা, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া, সকল জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন, জনসাধারণকে এই দলে সম্পৃক্ত করা, মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানুষের অধিকার কোথায় খর্ব হচ্ছে, হরণ হচ্ছে তা মানুষের কাছ থেকে জানা এবং মানুষের অধিকার মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার যে মহান ব্রত নিয়ে আমরা এবি পার্টি গঠন করেছিলাম, তার আর কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবি পার্টি একটি ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। দেশের কোথাও দলের জনসম্পৃক্ততা নেই বরং দিন দিন এবি পার্টির বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এবি পার্টি মানুষের সেবা করবে, মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে, সমস্যার সমাধান করবে- সেখান থেকে এবি পার্টি অনেক দূরে সরে গেছে।
সোলায়মান চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, আমাকে নামকাওয়াস্তে দলের উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বাস্তবে উপদেশ চাইলে উপদেশ দেওয়া যায়, না চাইলে তো আর উপদেশ দেওয়া যায় না। অতএব আমি মনস্থির করেছি, এই পার্টি যে অঙ্গীকার করে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আমার মাধ্যমে, তার ছিটেফোঁটাও এখন দলের মধ্যে নেই। এখন তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। এমন দলে থাকার চাইতে না থাকা শ্রেয় বলে মনে করে এবি পার্টির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এ মর্মে এবি পার্টির চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
তিনি বলেন, আমি নতুন কোনো দলে নয়, আমার পুরনো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীতে ফিরে যাবো। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমানের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। আমি ওনার সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি, আমি আবার জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করবো। এখন কেবল লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী মাধ্যমে আমরা যাতে সম্মিলিতভাবে এই দেশের সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও এ দেশকে সুন্দর দেশে পরিণত করতে পারি।
এবি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেই তিনি জামায়াতে ইসলামী আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বসুন্ধরার বাসায় যান।
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি আমার রাজনৈতিক বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আমি সাড়া দিয়েছি। এখন ওনারা বিবেচনা করবেন আমাকে জামায়াতে ইসলামীতে নেবেন কিনা।
তিনি বলেন, নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। আমি সাক্ষাতে যাওয়ার আগেই এবি পার্টি ত্যাগ করেছি। প্রসঙ্গক্রমে তাকে জানাই যে, আমি এবি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছি। তখন তিনি আমাকে জামায়াতে ইসলামীতে ফিরে আসার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেন।
১৯৬৪ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করেন এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে জামায়াতের রোকন হন। ওই বছরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হন।
বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করেন এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। ফেনীতে জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায় জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। পরে সংস্থাপন সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হন।
২০০৭ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পুনরায় জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন তিনি। সোলায়মান চৌধুরী জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য এবং দলের পেশাজীবীদের সংগঠন জাতীয় পেশাজীবী ফোরামের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৯ সালে জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে যুক্ত হন, যেটি পরে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ সংক্ষেপে এবি পার্টি নামে পরিচিতি পায়। সর্বশেষ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সহযোগী ফরম পূরণের মাধ্যমে তিনি এবি পার্টি ছেড়ে আবারো জামায়াতে ইসলামীতে ফিরলেন।