কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা, যা বলছেন উদীচীর সভাপতি

কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভক্তি এবং উত্তেজনার মধ্যে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি জানান, উদীচীর জাতীয় সম্মেলন ঘিরে একটি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগে থেকে তাদের শঙ্কা ছিল। যার প্রতিফলন ঘটে সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটি গঠনের সময়। 

কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সংসদ সভায় এমন একটি বিষয়নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে উদীচীর কর্মীদের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি বলে তার বিশ্বাস। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন তিনি।

উদীচীর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিন গত শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন হয়। সেখানে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে গোলযোগ হয়। পরে আলাদা করে দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। উভয় পক্ষ অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ঘোষণা করে। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পক্ষে জামসেদ আনোয়ার তপন এবং আরেক পক্ষে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নাম ঘোষণা করা হয়।

বিবৃতিতে বদিউর রহমান বলেন, কাউন্সিলে বিষয়নির্বাচনী কমিটি নতুন কেন্দ্রীয় সংসদের প্রস্তাব উত্থাপন করে। এরপর অধিবেশনের সভাপতি (বিষয়নির্বাচনী কমিটির সভাপতি ও সংগঠনের সহসভাপতি হাবিবুল আলম) নতুন নামের প্রস্তাব এবং কেউ নাম প্রত্যাহার করতে চান কি-না, তা জানতে চান। এ সময় প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদের জন্য নতুন অনেকগুলো নাম প্রস্তাব করা হয়। সব নাম যাচাই-বাছাই শেষে কেউ নাম প্রত্যাহার করতে চান কি না, তা জানানোর আহ্বান জানান সভাপতি। তখন অনেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এমনকি বিষয়নির্বাচনী কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল থেকেও অনেকে নাম প্রত্যাহার করেন। ফলে বিষয়নির্বাচনী কমিটির প্যানেলটি পূর্ণতা হারায়। তা সত্ত্বেও সভাপতি বিষয়নির্বাচনী কমিটির খণ্ডিত প্যানেল পাস করানোর চেষ্টা চালান। এ অবস্থায় কাউন্সিল হাউস ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত করার উদ্যোগ নেন বলে জানান বদিউর রহমান। তার অভিযোগ, হাবিবুল আলমের কাছে মাইক্রোফোন দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি (হাবিবুল) খারাপ ব্যবহার করেন এবং তাকে মাইক দেননি। একবার কথা বলা শুরু করতে পারলেও সঙ্গে সঙ্গে হাবিবুল মাইক নিয়ে নেন বলেও তার অভিযোগ। একপর্যায়ে সম্মেলনের দুজন স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে আসেন। 

উদীচীর কার্যালয়ের ভেতরে একটি চেয়ারে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামসেদ আনোয়ার তপন এসে তার বা পাশে বসেন বলে জানান বদিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ সময় সামনে বসা ছিলেন হাবিবুল আলমসহ কয়েকজন। এক পর্যায়ে হাবিবুল আলম আমাকে বলেন, আমরা আপনাকে মাথায় তুলে রাখব। বিষয়টি শুনে আমার হাসি পেয়েছে। এরপর আরিফ নুর, রহমান মুফিজা এসে জামসেদ আনোয়ার তপনকে বলতে থাকেন, আমাদের নতুন কমিটির প্রথম সভা এখানেই করতে হবে। জামসেদ আনোয়ার তপনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমি নিজের অবস্থান বুঝে ফেলি এবং সভা না করার কথা বলি। 

বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য তখন আমি নিজের অসুস্থতার কথা বলতে থাকি এবং হাবিবুল আলম ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে কাছে টেনে আমার শারীরিক অবস্থার কথা বলে আমার কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সংগঠনকে নিতে হবে বলে জানাই। আমি এও বলি যে আমার মনে হয় এখনই হাসপাতালে যাওয়া উচিত, অ্যাম্বুলেন্স ডাকো। পরক্ষণেই বলি, আমি আগে বাসায় যাই, সেখানে প্রেশার ও সুগার মেপে প্রয়োজনে বাসা থেকেই হাসপাতালে যাব। তখন হাবিবুল আলম দয়াপরবশ হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেন। বাসার পৌঁছে আমি মোবাইল বন্ধ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

ভোরে ঘুম ভাঙলে নিজের দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধ থেকে সারা দেশের উদীচীর কর্মীদের বিষয়গুলো জানানোর তাগিদ অনুভব করে এই বিবৃতি দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক বদিউর রহমান।