কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বৃত্তির দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষকদের অবস্থান

 নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে বৃহস্পতিবার সারাদেশের কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে হাজারো শিক্ষক জড়ো হয়ে সরকার ঘোষিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তাদের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান।

শিক্ষকদের অভিযোগ, সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ ইস্কান্দার আলী হাওলাদার এবং মহাসচিব রেজাউল হক বলেন, শিক্ষা সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও সমানভাবে যোগ্যতা অর্জন করছে, অথচ তাদের বৃত্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মহাপরিচালক জানান, একই বিষয়ে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের হওয়ায় আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তার বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা আশ্বস্ত না হয়ে জানান, আদালতের রায় যদি বৈষম্যমূলক হয় তবে তাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।

দুপুর একটার দিকে কর্মসূচি সমাপ্ত হলেও শিক্ষকদের হতাশা ও ক্ষোভ কাটেনি। অনেকেই জানান, ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর থেকে বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বিকল্প হিসেবে মেধাবৃত্তি ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালু ছিল। ২০২২ সালে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। অবশেষে চলতি বছর থেকে পরীক্ষার আয়োজনের ঘোষণা এলে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হয়, যা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক।

শিক্ষকরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা আগামী দিনে আরও বড় কর্মসূচিতে নামবেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। এদিকে শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের অনেকেই মনে করছেন, একটি অভিন্ন বৃত্তি পরীক্ষার আওতায় সব শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষাক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।

অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন সকলের দৃষ্টি আদালতের রায়ের দিকে, যা এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ করবে।