মোহাম্মদ আলী : দুরমুঠে সোহেল মোল্লার বাড়ির আঙ্গিনায় সাবমার্সিবল পাম্প ওভারহেড ট্যাংকসহ গভীর নলকূপ স্থাপন হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু এখনো কেউ পানি খেতে পারেনি। কারণ এখনো চালু হয়নি, লাগেনি বিদ্যুৎ সংযোগ।
আমজাদ হোসেনেরটা চালু হয়েও বন্ধ। কারণ সেই পানি ভালো না। পানিতে আয়রন, ঘোলা ও গন্ধ। খাওয়া যায় না। ব্যবহারও করা যায় না। তাই প্রায় ৬ মাস যাবত বন্ধ।
বিবেকের বাড়িরটাও একই অবস্থা। তবে, সেটা চালু আছে। মোঃ রুহিদ হাসানের বাড়ির গভীর নলকূপ স্থাপন থাকা সত্বেও তারা টিউবওয়েলের পানি পান ও ব্যবহার করেন। কারণ পাম্পের পানি গৃহস্থলি কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। গোসল করলে চুল আঠা আঠা হয়ে যায়, কাপড় ধুইলে হুলুদ হয়ে যায়। খাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। আরও অনেকে ভোগছেন অনেক সমস্যায়।
জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে সরকারের পক্ষ থেকে “সমগ্রদেশে গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ১০ বাড়ির জন্য সাবমার্সিবল পাম্প ওভারহেড ট্যাংকসহ গভীর নলকূপ স্থাপন” ও ২০২৩/২৪ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ণে মানব সম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে কাজ চলছে। বাদ যায়নি জামালপুর জেলাও। এ জেলার ৩টি উপজেলায় (মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি) এ প্রকল্পের কাজ চলমান। সরকারের অর্থায়ণে ১০ বাড়ির জন্য নলকূপ স্থাপন প্রকল্পে প্রতিটির জন্য বরাদ্দ ব্যয় ১০ লাখ টাকা। এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ণে ৩ উপজেলায় ৯৬টি নলকূপ স্থাপনের জন্য বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্প দুটির কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। কোথাও সুবিধাভোগীরা সেটার ব্যবহার শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে মেলান্দহ উপজেলা উল্লেখযোগ্য। এ উপজেলার বেশ কয়েকটি হস্তান্তরকৃত গভীর নলকূপ স্থাপন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে হয়েছে।
তাতে দেখা গেছে, কারো পাম্প বন্ধ আছে, কারোটা বিদ্যুৎ মিটার লাগেনি, কারোটা আবার চালু থাকলেও সেটার পানি খেতে পারছে না, কেউ ব্যবহার করতে পারছে না! আছে নির্মাণ কাজে অনিয়মেরও অভিযোগ। ১০ বাড়ির নলকূপের জন্যও দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার লিটারের ট্যাংক ও ৪০ বাড়ির জন্যও দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার লিটারের ট্যাংক। ৪০ বাড়ির জন্য যে নলকূপগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর কোন প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়নি। ফলে অস্বাস্থকর পরিবেশে গ্রহণ করছে স্বাস্থকর খাবার পানি। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পাম্পের অনুকূলে ১০ হাজার ৫শ টাকা জমার দেওয়ার কথা থাকলেও সদস্যের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আরও ৫শ করে।
দুরমুঠ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মনোয়ার হোসেন এর স্ত্রী শায়লা বেগম বলেন, এই ট্যাংক বসিয়ে আমার ক্ষতি হয়েছে। এটা আমার কোনো কাজে লাগে না। বরং আমার জন্য ভোগান্তির কারণ হয়েছে।
নাংলা গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, ৬ মাস হয়েছে আমার বাড়ির নলকূপ স্থাপনেন কাজ শেষ হয়েছে। আজও মিটার লাগেনি। অতএব এটা আমাদের জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ বুঝতে পারছি না।
কাজাইকাটা পূর্বপাড়া মসজিদ কমিটি বলেন, আপনারা এসে এটা তুলে নিয়ে যান এটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না।
এব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমাদের প্রকল্পগুলো চলমান আছে। সুবিধাভোগীদের সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করছি। যার যার সমস্যা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সমাধান করে দেওয়া হবে।