গাজায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের

টানা প্রায় ছয় মাস ধরে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, ভূখণ্ডটির লাখ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছেন।

আছে দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারিও। এমন অবস্থায় গাজায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। এমনকি ভূখণ্ডটিতে দুর্ভিক্ষ শুরু হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর কোনও দেরি না করে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে মৌলিক খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিচারকরা সর্বসম্মতভাবে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আইসিজে বিচারকরা বৃহস্পতিবার এক আদেশে বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা তাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং দুর্ভিক্ষ ও অনাহার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

তারা বলেছেন, ‘আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে, গাজার ফিলিস্তিনিরা আর কেবল দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে না … সেই দুর্ভিক্ষ শুরু হচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স অনুসারে, ইতোমধ্যেই গাজায় অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ২৭ জন শিশুসহ অন্তত ৩১ জন মারা গেছে।’

আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক এই আদেশে ‘বিলম্ব না করে, জাতিসংঘের সাথে পূর্ণ সহযোগিতায়, খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সামগ্রীসহ জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইসরায়েলকে বলেছে আদালত। আইসিজের অবশ্য তার রায় কার্যকর করার কোনও ব্যবস্থা নেই।

গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে চলমান মামলার অংশ হিসেবে আদালতের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা নতুন ব্যবস্থার অনুরোধ করেছিল।

মূলত আইসিজে বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই আদালত ইসরায়েলকে গণহত্যা তথা জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় পড়তে পারে এমন যে কোনো ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়া ইসরায়েলি সৈন্যরা যেন গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কোনও গণহত্যামূলক কাজ না করে তা নিশ্চিত করতেও সেসময় নির্দেশ দেয় আদালত।

বৃহস্পতিবারের আদেশে আদালত তার জানুয়ারির পদক্ষেপগুলোকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে। তবে একইসঙ্গে ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজাজুড়ে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক পরিষেবা এবং মানবিক সহায়তার নিরবচ্ছিন্ন বিধান নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে।

বিচারকরা আরও বলেছেন, ‘স্থল ক্রসিং পয়েন্টের সক্ষমতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ খোলা রেখে’ মানবিক সহায়তার প্রবেশ বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া ইসরায়েল কীভাবে এই রায় কার্যকর করেছে তা বিস্তারিতভাবে জানাতে আগামী এক মাসের মধ্যে দেশটিকে (ইসরায়েলকে) একটি প্রতিবেদন দাখিল করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

অবশ্য আদালতের এই আদেশের বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা বর্বর এই আগ্রাসনে অন্তত ৭৪ হাজার ৯৮০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।