গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী, স্বীকার করল ইউক্রেন

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ দনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এমন কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। এমনকি রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের এই শিল্প এলাকায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছে তারা।

বুধবার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

দনিপ্রোর অপারেশনাল-স্ট্র্যাটেজিক গ্রুপ অব ট্রুপসের ভিক্টর ত্রেহুবভ বিবিসিকে বলেন, “দনিপ্রোপেত্রভস্কে এটাই প্রথম এ ধরনের বড় আকারের হামলা”। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, রুশ অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত গ্রীষ্ম থেকেই রাশিয়া দাবি করে আসছে যে তাদের সেনারা ওই এলাকায় প্রবেশ করেছে। তারা দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের ভেতরে আরও গভীরে ঢোকার চেষ্টা করছে। গত জুনের শুরুর দিকে রুশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, দনিপ্রোপেত্রভস্কে তাদের অভিযান শুরু হয়েছে। যদিও ইউক্রেনীয় সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, তারা কেবল সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরেছে।

দনিপ্রোপেত্রভস্কে রুশ অগ্রযাত্রা ইউক্রেনের মনোবলের জন্য বড় আঘাত হবে, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে ভাটা পড়ছে— যদিও আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হয়েছে।

ইউক্রেনীয় ডিপস্টেট ম্যাপিং প্রজেক্ট মঙ্গলবার জানায়, রুশ বাহিনী দনিপ্রোপেত্রভস্ক সীমান্ত ঘেঁষে দুইটি গ্রাম— জাপোরিজকে এবং নভোহ্রিহোরিভকা দখল করেছে। তবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এ দাবি নাকচ করেছেন। তার ভাষায়, জাপোরিজকে এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং নভোহ্রিহোরিভকার আশপাশে লড়াই চলছে।

রাশিয়া দনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলকে দোনেৎস্কসহ পূর্ব ইউক্রেনের অন্যান্য চার অঞ্চলের মতো নিজেদের দাবি করেনি। তবে রাজধানী দনিপ্রোসহ এর বড় শহরগুলোতে একাধিকবার আক্রমণ চালিয়েছে।

বিবিসি বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগে দনিপ্রোপেত্রভস্কে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করত। এটি ডনবাসের (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) পর ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভারী শিল্পাঞ্চল ছিল।

যদিও রাশিয়ার সেনাবাহিনী ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং প্রচুর হতাহতের মুখে পড়ছে, তারপরও রুশ বাহিনী সম্প্রতি দোনেৎস্কে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ মাসের শুরুতে তারা হঠাৎ করেই দোব্রোপিলিয়ার কাছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করে ১০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল, তবে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, সেই অগ্রযাত্রা থেমে গেছে।

খবরে বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন যদি দোনেৎস্কের অবশিষ্ট অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়, তাহলে তিনি যুদ্ধ শেষ করতে রাজি। তবে অনেক ইউক্রেনীয় মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য এর চেয়েও বড়।

কিয়েভের প্রেসিডেন্ট অফিসের উপপ্রধান কর্নেল পাভলো পালিসা গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের বলেন, ক্রেমলিন দনিপ্রো নদীর পূর্বের পুরো ইউক্রেন দখল করতে চায়। এই নদী ইউক্রেনকে দুইভাগে ভাগ করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাসও সতর্ক করে বলেন, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের ভূমি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে “একটি ফাঁদ”। তিনি বলেন, “আমরা ভুলে যাচ্ছি, রাশিয়া কোনও ছাড় দেয়নি, বরং তারাই এখানে আগ্রাসন চালাচ্ছে।”