ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার তিনদিন পর রাইসা মনি (৯) এর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে মৃতদেহটি দেখে বাবা সনাক্ত করেছিলেন রাইসাকে। সেদিন ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া রাইসার মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহত শিশু রাইসার বাবার কাছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
রাইসার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাইসার মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা থেকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। শুক্রবার সকালে তাকে দাফন দেওয়ার কথা।
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনি। দুর্ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মুখমণ্ডলের অংশ বিশেষ দেখে রাইসা হিসেবে দাবি করেন বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)। তবে তার দাবিতে আস্থা রাখতে পারেনি হাসপাতল কর্তৃপক্ষ। সিএমএইচ থেকে গত মঙ্গলবার বিকেলে মৃতদেহের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে। ডিএনএর প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত রাইসার দেহ হস্তান্তরে রাজি হয়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাইসা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখ মীম আক্তার (৩৬) দম্পতির মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাইসা মেঝ। সে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল (কোড- ২০১০, সেকশন-স্কাই)। বড় বোন সিনথিয়া (১৪) ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভাই সবার ছোট। নাম রাফসান, বয়স চার বছর।
স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়া নগরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তিনি (শাহাবুল) একটি গার্মেন্ট এক্সসোরিস প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী।
রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ (৩৮) রাত নয়টার দিকে ঢাকা পোস্টকে জানান, দুর্ঘটনার পর থেকেই আমরা রাইসাকে খুঁজছিলাম। মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটার দিকে রাইসা মনির খোঁজ পাওয়া গেছে সিএমইতে। তবে তখন সে আর জীবিত নেই।
তিনি বলেন, রাইসার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পেটের ওপর থেকে মাথা পর্যন্ত বেশি পুড়েছে। তবে তার মুখমণ্ডল অংশিক অংশ যা দেখা যাচ্ছিল তা দেখে রাইসাকে সনাক্ত করেন শাহাবুল। পরে ডিএনও পরীক্ষায় বাবার দাবিই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হলো।
রাইসার চাচাতো ভাই তরিকুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাইসাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হলে প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকার উত্তরা নয়া নগরে ভাড়া বাসায়। পরে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতেই তাকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে স্থানীয় শামসুল উলুম মসজিদ ও মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বাজরা গ্রামের কবরাস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।